১৫ই মার্চ, ২০১৯। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে হামলা করে বন্দুকধারী আততায়ী। ঠিক সেই সময়টাতে ঐ মসজিদেই জুমার নামাজ আদায় করতে বাসে করে আসছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কাছাকাছি আসতেই মসজিদ থেকে পালিয়ে বের হওয়া আহত এক নারী টাইগারদের সতর্ক করেন যে হামলা হয়েছে। প্রাণ ভয়ে কোনোরকমে নিরাপদে সেখান থেকে চলে আসতে সক্ষম হন তামিম-মুশফিকরা। ততক্ষণে খুনির এলোপাথারি গুলিতে নামাজরত মুসুল্লি ও পথচারিসহ নিহত হয় ৫০ এর বেশি নিরীহ মানুষ। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাওয়া টাইগারদের জন্য সেই দিনটি আজও বিভীষীকার। ঠিক দুই বছর পর ফের সেই নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দল।
কোয়ারেন্টিনের পুরো ১৪ দিনের সময়টা ক্রাইস্টচার্চের একটি হোটেলেই কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে বর্তমানে দল কুইন্সটাউনে অনুশীলন করছে ওয়ানডে সিরিজের প্রস্তুতি নিতে। যতটা জানা গেছে এখনো আতঙ্কে আছেন সেই সময় দলের সঙ্গে থাকা অনেক ক্রিকেটার। খোদ ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ক্রাইস্টচার্চে বাজি ফোটানোর শব্দকে গুলি ভেবে ভয়ে শিউরে উঠেছিলেন এবারের সফরে। গতকাল ছিল সেই বিভীষীকাময় ১৫ই মার্চ। নিউজিল্যান্ডে কেমন কাটলো দিনটি! জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন সাবধানে। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে দলের সঙ্গে থাকা হাবিবুল বাশার দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘আমরা সবাই ভালো আছি। দারুণ অনুশীলন করেই দিন কাটছে। বাইরের কোনো বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করি না। সময়টা খুব ভালো কাটছে। আজ আমরা একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবো।’ গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দল পৌঁছেছে নিউজিল্যান্ডে। এরপর সেখানে ১৪ দিন কঠোর কোয়ারেন্টিনে দিন পার করেছে টাইগাররা। সেই সময়ে চারটি করোনা পরীক্ষাতেও পাশ করেছে পুরো দল। সেখান থেকে দল সোজা চলে গেছে কুইন্সটাউনে। ওয়ানডে মিশনে মাঠে নামার আগে শুরু করেছে দলগত ক্যাম্প। কেমন চলছে টাইগারদের অনুশীলন? এই বিষয়ে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমাদের অনুশীলন খুব ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে দারুণ সুযোগ সুবিধা। মাঠে আমাদের সেন্টার উইকেটে অনুশীলনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সাইড নেটগুলোও পাচ্ছি। ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিং সবকিছুই নিয়ম করে হচ্ছে। দলের সবাইকে নিয়ে অবসর সময়টাও আমরা আনন্দ নিয়ে ঘুরে কাটিয়েছি। এক কথায় আসাধারণ সময় কাটছে আমাদের। আজ আমাদের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। লাল ও সবুজ দুটি দলে ভাগ হয়ে খেলবে দল। যেহেতু আমাদের ২০ সদস্যের দল সে কারণে কুইন্সটাউন থেকে স্থানীয় পাঁচ ক্রিকেটার আমরা নিয়েছি। ওরা আমাদের খুভ ভালোভাবেই সহযোগিতা করছে।’
নিউজিল্যান্ডে বড় চ্যালেঞ্জ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া। সেই কাজটিও দারুণভাবে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, ‘এটাতো সবারই জানা যে এখানকার কন্ডিশন ভীষণ কঠিন। একেক জায়গায় একেক রকম ওয়েদার থাকে। আমাদের জন্য যেটা প্লাস পয়েন্ট তা হলো করোনার কারণে এখানে অনেক দিন আগেই এসেছি। ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনের মধ্যেও এক সপ্তাহ অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি। এরপর কুইন্সটাউন এসে সবাই দলগত অনুশীলন করছি। এখান থেকে ১৭ই মার্চ যাবো ডানেডিন। সেখানে ২০ তারিখ সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগেও অনুশীলন হবে। সব মিলিয়ে কন্ডিশনটা ছেলেরা ভালোভাবেই মানিয়ে নিতে পারছে।’ প্রথম ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলে ইনজুরির খবর এসেছে। তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তবে এ নিয়ে নির্বাচক বাশার চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘ও সামান্য একটু চোট পেয়েছে। ভয় পাবার মতো কিছু নয়। এক্সরেও লাগেনি। ঠিক হয়ে যাবে। ওকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে তাই প্রস্তুতি ম্যাচে রাখা হয়নি।’ চোটের কারণে সিরিজে নেই নিউজিল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এটিকে অনেকেই টাইগারদের জন্য সুখবর মনে করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক বাশার মনে করেন এতে টাইগারদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘কেন উইলিয়ামসন অনেক বড় মাপের ক্রিকেটার। কিন্তু তিনি নেই বলে যে আমাদের খুশি হতে হবে এমনটাও না। কারণ, তাকে ছাড়াও তারা নিজেদের মাটিতে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দল। তার থাকা না থাকা এই দলটির ওপর কোনো প্রভাবই ফেলবে না। তার চেয়ে বরং আমাদের এসব না ভেবে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।’