কিভাবে হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা?

প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ‘অটো পাস’ পাচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কিভাবে হবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম। করোনার প্রভাবে থমকে আছে পরীক্ষা। এরই ধারাবাহিকতায় যদি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয় তবে সৃষ্টি হবে নতুন সঙ্কট।
এবারই প্রথম ২০২১ সাল থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। তবে এই পরীক্ষায় বাইরে থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)’র তথ্যানুযায়ী ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় ৩৯টিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে প্রায় ৬০ হাজার।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়া অটো পাস হবে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। যদিও সব শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় যাবে না। তারপরও বাকি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা আসন পূরণ হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। অনেকেই আবার পাড়ি জমাবে দেশের বাইরে। এরপরও সকল শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ হচ্ছে না তা অনুমেয়। তবে উচ্চ শিক্ষায় আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো গেলে সঙ্কটের সমাধান অনেকটাই হবে বলে জানান ইউজিসির সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরদৌস জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাধারণত অক্টোবর থেকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। অটো পাসের ঘোষণা দেয়া হলেও যেহেতু ফলাফল ডিসেম্বরে সেহেতু স্বভাবতই এবারের পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। এবারের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা তিনটি গুচ্ছ করে নেবার পরিকল্পনা করছে ইউজিসি। ইউজিসি থেকে জানা যায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি ও প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ভিসিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জোড় দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও। রোবরার জাতীয় কন্যাশিশু দিবসের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী বছর (২০২১) বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে তা করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সমন্বিতভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া আয়োজন করা হবে।
আবার জানা যায়, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র নম্বর ছাড়াই স্নাতকে ভর্তির বিষয়টি ভাবছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বিষয়ে বলেন, সিদ্ধান্ত আসলে নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আমরা শুধু কো-অর্ডিনেট করব। আমরা আজ শুনবো। কিভাবে পরীক্ষা নিতে চান। তিনি আরো বলেন, এবারের যেহেতু ফলাফল আসতেই ডিসেম্বর হয়ে যাবে কবে পরীক্ষা হবে, না হবে এই নিয়েও একটা চিন্তা আছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ইমরান কবির চৌধুরী বলেন, আজ ইউজিসির সঙ্গে একটা মিটিং আছে। আবার ১৭ তারিখ আমাদের বিশ্বিদ্যালয়ের পরিষদের মিটিং হওয়ার বুঝতে পারবো কিভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যাবে। এখনও আমরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষেই আছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীন আক্তার বলেন, শীঘ্রই এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত কিছু জানানোর মতো পর্যায়ে পৌঁছাইনি। এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত জানাবো। সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে আসব।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *