কর্মসংস্থানে বিপর্যয় এড়াতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় দেশগুলো

অর্থনীতির চাকা সচল করতে যতই লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করা হোক না কেন, পরিস্থিতি তো আর পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এখনো। অর্থনৈতিক কার্যক্রম মহামারী-পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসতে আরো সময় লাগবে। সুতরাং ব্যবসা খাত ও কর্মসংস্থানকে ভয়াবহ পতন থেকে রক্ষা করতে সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনার প্রয়োজনীয়তা এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বিষয়টি ইউরোপীয় দেশগুলো অনুধাবন করতে পেরেছে খুব দ্রুতই। এ কারণে তারা পূর্বানুমানের চেয়ে আরো বেশি সময় ধরে সহায়তা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।

নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তি চীনে হলেও মহামারীটি অর্থনৈতিকভাবে বেশি আঘাত হেনেছে ইউরোপে। যেমন যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি প্রায় ৩০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার মুখে রয়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চে লকডাউন আরোপের পর থেকে দেশটিতে বেকারত্বের হারও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কেবল যুক্তরাজ্যই নয়, বরং পুরো ইউরোপের অর্থনীতিই একই ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে।

পুরো মহাদেশে সরকারগুলোর বিভিন্ন প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের কারণে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও প্রায় পাঁচ কোটি কর্মী ছাঁটাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এসব প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ঋণসহায়তার পাশাপাশি কর ও ঋণ অবকাশের মতো পদক্ষেপও রয়েছে। লকডাউন শিথিলের পরও এসব সহায়তা অব্যাহত থাকছে। কারণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বর্তমানে যে গতি দেখা যাচ্ছে, তার স্থিতিশীলতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদরাই সন্দিহান। অনেক প্রতিষ্ঠানই এখনো তাদের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেনি।

কমার্সব্যাংকের অর্থনীতিবিদ পিটার ডিক্সন বলেছেন, ‘সহায়তার পরিমাণ কমানোর ফলে অর্থনীতিতে কী রূপ প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে সরকারগুলোকে আগে থেকেই পর্যালোচনা করতে হচ্ছে। এছাড়া সরকারি সহায়তা আরো অব্যাহত রাখতে হবে কিনা, আর রাখলেও পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে কিনা, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হচ্ছে।’

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, কিছু জায়গায় দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ শুরু হচ্ছে, যেমনটি দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্যের লিচেস্টার ও পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের নিকটাবর্তী কয়েকটি জেলায় পুনরায় সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে নতুন করে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে।

লকডাউনের মধ্যে সরকারি সহায়তা পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল কর্মসংস্থানের সুরক্ষা। এখনো তা-ই রয়েছে। যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো এরই মধ্যে এ ধরনের সহায়তা প্যাকেজ অন্তত আগামী মাস পর্যন্ত অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ফরাসি সরকার নতুন দফায় অবকাশ কর্মসূচি চালু করেছে, কোম্পানিগুলো প্রায় দুই বছর পর্যন্ত যার সুবিধাভোগী হবে। জার্মানিও তাদের ‘কুর্জারবাইত’ কর্মসূচির অধীনে কর্মীদের মজুরি নিশ্চিত করতে লকডাউনের মধ্যে এর বিভিন্ন শর্ত শিথিল করেছে। এমনকি তারা এও ঘোষণা দিয়েছে যে প্রয়োজন হলে এ সুবিধার মেয়াদ আরো বাড়ানো হবে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কেবল সহায়তার আকার বা এর মেয়াদ বাড়ানোটাই শেষ কথা নয়; বরং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে এর সমন্বয় করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাজ্যে শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে প্যানেল গঠন: নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে যুক্তরাজ্যে শীর্ষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে একটি পরামর্শক প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এ প্যানেলের কাজ হবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিপথের একটি রূপকল্প প্রণয়ন করা। এ প্যানেলের নেতৃত্বে রয়েছেন টেসকো চেয়ারম্যান জন অ্যালান।

করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দা ভাবে কর্মসংস্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাঘা বাঘা কোম্পানি হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। এ অবস্থায় যত বেশি সম্ভব কর্মীকে সুরক্ষা দিতে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত ব্রিটিশ সরকার।

এক সাক্ষাত্কারে টেসকো চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে কর্মসংস্থান হারানোর সুনামি ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। এ অবস্থায় আমাদের নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি পুরনোরা যেন কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হচ্ছে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *