করোনা মহামারী: দক্ষিণ এশিয়ার মানবিক বিপর্যয়ে উদ্বেগে জাতিসংঘ

ভারতে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিতের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশেও চলছে ভাইরাসটির সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রবাহ। এমন অবস্থায় গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এশিয়ার এ অঞ্চলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইএফআরসি)।

কেবল ভারত নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপালের অনেক হাসপাতাল কভিড-১৯ রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতের সীমান্তসংলগ্ন নেপালের দক্ষিণের শহরগুলোতে যেসব হাসপাতাল আছে সেগুলোতে ক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। গত মাসের চেয়ে ৫৭ গুণ বেড়েছে নেপালে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশটির বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। নেপাল ছাড়াও এ অঞ্চলের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও সম্প্রতি সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। হাসপাতাল ও নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র রোগীতে পরিপূর্ণ হতে দেখা গেছে। সংক্রমণ বেড়েছে মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায়ও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, গোটা বিশ্বের ৪৬ শতাংশ সংক্রমণই ভারতে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে জাতিসংঘ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এ থেকে সৃষ্ট বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারইয়া আদজেই। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সরকারগুলোর উচিত তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতার ব্যবহার করে এ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা। এসব দেশের অংশীদারদেরও দ্রুত সহায়তা পাঠানো উচিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও আর দেরি না করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি সবাইকে মাস্ক পরতে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও বলেন তিনি। এছাড়া এ অঞ্চলের যে যখন সুযোগ পাবে তখনই টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
[১] সাতকানিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা ≣ [১] বাগেরহাটে মোরেলগঞ্জে তীব্র তাপদাহে তরমুজের বাজারে ‘আগুন’ ≣ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল: ১৭ এপ্রিল : ৫০ বছর আগে ও পরে

তবে সংক্রমণ বাড়ার পরও দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়ছে না টিকা গ্রহণের হার। এসব দেশে মূলত যারা বেশি ঝুঁকিতে আছে তাদেরই আগে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। যেমন সম্মুখসারিতে কর্মরত জনগোষ্ঠী, বয়স্ক বা অন্য রোগ আছে এমন মানুষ। নেপালে কেবল ১ শতাংশ মানুষ দুই ডোজের টিকা পেয়েছে। অন্যদিকে ভারতে পেয়েছে ২ শতাংশ মানুষ। ইউনিসেফ বলছে, টিকা দেয়ার হার বাড়ানো না গেলে ভাইরাসের সংক্রমণ আরো বেড়ে যাবে এবং এটি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যাবে। মালদ্বীপ ও ভুটান ছাড়া এ অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রতি ১০ জনের একজনেরও কম মানুষ টিকার আওতায় এসেছে।

আইএফআরসির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আলেক্সান্দ্রার ম্যাথিউ বলেন, ভাইরাস সীমান্ত বোঝে না। আর ভারতের যে ভ্যারিয়েন্টটির দেখা পাওয়া গেছে সেটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই ভারতসহ গোটা অঞ্চলে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

ভারতের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটিতে ২০ লাখ ফেস শিল্ড ও দুই লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক পাঠিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটির অংশীদার দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সহযোগিতায় সরাসরি নয়াদিল্লিতে পাঠানো হয়েছে এসব সামগ্রী। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েট্টা ফোর বলেন, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সবার জন্যই একটি সতর্কবার্তা। গোটা বিশ্ব যদি এখন এগিয়ে এসে ভারতে সহায়তা না করে তাহলে এ পরিস্থিতি পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ইউনিসেফ ও এর অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন শিশু ও তাদের পরিবারগুলোকে সুরক্ষিত রাখা যায়। এজন্য প্রয়োজনমতো অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ বিভিন্ন জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামও সরবরাহ করা হচ্ছে। মহামারী শুরুর পর থেকেই ভারত সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করছে ইউনিসেফ। ৬৬ কোটি মানুষের কাছে সুস্থ থাকার তথ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেন কভিড-১৯ সংক্রান্ত কোনো ভুল তথ্য না পায়, সেদিকেও লক্ষ রাখছে সংস্থাটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *