করোনা নিয়ন্ত্রণ না হলে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। ৮৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় করার দায়িত্ব এনবিআররের। ব্যবসা যদি না হয়, টাকা আসবে না।

শুক্রবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত অনলাইন সাপ্তাহিক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. সাদিয়া চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন ডা. জিয়া হায়দার।

মোশাররফ হোসেন আরও বলেন,  আর রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে এনবিআরের লোকবল বাড়াতে হবে, অফিসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এটা সদিচ্ছার ব্যাপার। তারপরেও ভয় নেই, আমাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভ আছে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ব্যালেন্স শিটে হাত দেবে। বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা ঋণ দেবে, ঋণের পরিমাণ বাড়বে কিন্তু টাকার অভাব হবে না। বাজেট কতটা দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের মতো রাজনীতি কোথাও নেই। পোস্টিং দিতে গেলে কিংবা কেনাকাটা করতে গেলে পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স টের পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে দেশ চালাচ্ছেন। কিন্তু উনি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকতে পারবেন না। প্রত্যেকটা জায়গায় মানুষ কাজ করতে হবে। বিশেষায়িত চিকিৎসা যারা দিতে পারেন এমন অনেকেই অবসরে আছেন। তাদের খোঁজ করে সমন্বয় করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালের ভেতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হবে। যারা বিদেশ থেকে আসছে তাদের কাজে লাগাতে হবে। যারা করোনা মোকাবিলায় যারা আগ্রহী তাদের কাজে লাগাতে হবে। শত্রু-মিত্র এক হয়ে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, প্রত্যেককে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতি আরও ছয় মাস এমন থাকতে দেওয়া যাবে না। এ রকম থাকলে প্রচুর লোক বেকার হবে, না খেয়ে মারা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেখছি বেসরকারি ব্যাংক বেতন কমাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ অল্প আয় করে কিন্তু সবটা ব্যয় করে। কভিড কন্ট্রোল করা গেলে মানুষ তাই করবে, তাহলেই অর্থনীতি চলবে।

ডা. সাদিয়া চৌধুরী বলেন, জন্ম কিংবা মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন হতে হবে। তাহলেই কেবল মোট জনসংখ্যা জানা যাবে। বাংলাদেশে সেটা এখনো হয়নি। যে কারণে কত জন আক্রান্ত হয়েছেন শতাংশের হিসাবে আমরা যেতে পারছি না। জোন হবে কতজন আক্রান্ত সেটার ভিত্তিতে। সেই সংখ্যাটাই জানা যাচ্ছে না। এখনো ভবিষ্যত পদক্ষেপ হিসেবে সরকারকে নিবন্ধনের দিকেই যেতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যে টাকা আছে তা পর্যাপ্ত এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা কোথায় খরচ হবে, কীভাবে খরচ হবে সেটা আমাদের ভাবতে হবে। তার জন্য গ্যাপ খুঁজতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিস প্রক্রিউরমেন্ট হচ্ছে। বেশি দামে নিম্নমানের উপকরণ আনা হচ্ছে। লোকালি টেস্ট কিট উৎপাদনে যাওয়া যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের। যে লোন করে আনা হয়েছে, সেই টাকা আগামী দুই প্রজন্মকে পরিশোধ করতে হবে।

ডা. সাদিয়া চৌধুরী বলেন, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ তাদের ঠিক মতো প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে না, আমাদের সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে ওষুধ আসার কথা সেটা আসছে না। এতে পরিবার পরিকল্পনাও থাকবে না। কোভিডের কারণে অন্য রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল, সেটাতে ব্যাঘাত হয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার আবারও বেড়ে যাবে।

আমাদের পরিকল্পনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে না। এই আলোচনা হওয়ার জন্য একটি মাধ্যম থাকতে হবে। তাছাড়া পরিকল্পনা কাজ করবে না, বলেন ডা. সাদিয়া।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *