এয়ারটেল আফ্রিকার নিট মুনাফা কমেছে ৫৭%

ভারতী এয়ারটেলের বৃহৎ একটি বাজার আফ্রিকা। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ভারতী এয়ারটেলের আফ্রিকা কার্যক্রমের নিট মুনাফা ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৫৭ শতাংশ কম। এয়ারটেল আফ্রিকা এ নিয়ে টানা তৃতীয় প্রান্তিকের মতো লোকসানের তথ্য দিল। খবর ইটি টেলিকম।

৩০ জুন সমাপ্ত প্রান্তিকের আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের পর এয়ারটেল আফ্রিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রঘুনাথ মান্দাভা বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আফ্রিকার টেলিকম বাজারে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিশেষ করে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা কেমন হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে ভাইরাসটির প্রকোপ ঠেকাতে সরকার কেমন পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে সংশয় বিরাজ করছে। এমন অনিশ্চয়তাই আমাদের নিট মুনাফা কমার প্রধান কারণ।

এয়ারটেল আফ্রিকার আর্থিক খতিয়ান অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ধারাবাহিক ভিত্তিতে ১৪টি দেশের কার্যক্রম থেকে একীভূত নিট মুনাফা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চেয়ে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। অবশ্য বার্ষিক হিসেবে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির একীভূত নিট মুনাফা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৮৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। এয়ারটেল আফ্রিকার প্রধান সেবার মধ্যে রয়েছে ভয়েস কল, ডাটা ও মোবাইল মানি। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভয়েস কল সেবা থেকে এয়ারটেল আফ্রিকার রাজস্ব বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, ডাটা সেবা থেকে রাজস্ব বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোবাইল মানি সেবা থেকে রাজস্ব বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সুদ, কর, অবচয় এবং ক্রমশোধ পরিশোধের আগে এয়ারটেল আফ্রিকার আয় এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

এয়ারটেল আফ্রিকার সিইও রঘুনাথ মান্দাভা বলেন, কভিড-১৯ বিস্তার ঠেকানোর অংশ হিসেবে মানুষের অবাধ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে। এছাড়া আফ্রিকার দেশগুলোয় নেটওয়ার্ক হালনাগাদ, স্পেকট্রাম ও লাইসেন্স বাবদ বড় অংকের অর্থ ব্যয় করায় নিট মুনাফা কমেছে বলে দাবি করেন তিনি। অবকাঠামোগত বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আফ্রিকার দেশগুলোতে পরিবর্তিত নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে এয়ারটেল আফ্রিকা।

তিনি বলেন, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে নিট মুনাফা কমলেও তাদের সেবায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। একই সময় মোবাইল ডাটা ও ‘এয়ারটেল মানি’ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন আগের চেয়ে বেড়েছে।

বিবৃতিতে এয়ারটেল আফ্রিকা জানায়, আফ্রিকার বাজার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাজারটিতে ব্যবসা জোরদারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সম্প্রতি বাজারটি ঘিরে এয়ারটেলের ব্যবসা কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবসা কৌশলে পরিবর্তন আনায় গত প্রান্তিকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তবে কার্যক্রম ঘিরে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নিট মুনাফা কমেছে। আফ্রিকায় সেবা, ভয়েস কল, ডাটা ও এয়ারটেল মোবাইল মানির মতো সেবাগুলোর চাহিদা ক্রমে বাড়ছে, যা রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আফ্রিকার অনেক দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রভাব পড়ছে। আমরা ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতেও নিরবচ্ছিন্ন সেবা সরবরাহে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এয়ারটেল আফ্রিকা স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসতে সক্ষম হয়েছে।

আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ নাইজেরিয়ার টেলিযোগাযোগ খাতে অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে এয়ারটেল। গত নভেম্বরে দেশটিতে ৭ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এয়ারটেল আফ্রিকা। এ অর্থ নাইজেরিয়াজুড়ে ফোরজি নেটওয়ার্কের বিস্তারে ব্যয় করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাইজেরিয়ার টেলিযোগাযোগ খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। মানুষের হাতে হাতে পৌঁছতে শুরু করেছে সেলফোন। যে কারণে ইন্টারনেটের ব্যবহারও দ্রুত বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ বাজারে ফোরজি নেটওয়ার্কের বিস্তারে এলটিই কাভারেজ বিস্তৃৃত করেছে এয়ারটেল আফ্রিকা। এখন দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকা মহাদেশের ১৪টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এয়ারটেল আফ্রিকা। আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠানটির ১০ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *