এমন কিছু করে যাওয়া উচিত যেন জীবনটা বৃথা না যায়…

লতি মাসের শুরুতে দেশে লকডাউন অনেকাংশে তুলে দেয়া হয়েছে। দীর্ঘসময় বাদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় ছোট পর্দার শুটিং। ৫ জুন চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও শুটিং শুরুর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা শুটিং শুরুর বিষয়ে অনিচ্ছা পোষণ করছেন। আরো কিছুটা সময় পর্যবেক্ষণ করে তবেই তারা নামতে চান শুটিংয়ে। কাজেই এখনো ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বিনোদন অঙ্গনের অনেক ব্যক্তিত্ব। মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেক দিন ধরে গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী ও মডেল জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। লকডাউনের আগে ‘স্বপ্নবাজি’ ছবির কাজ করছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এরই মধ্যে অনেকখানি কাজও হয়ে যেত। এখন যেহেতু ঘরবন্দি, তাই হাতে অনেক অবসর সময়। তাই এ অবসরে শরীরচর্চা, ভালো-মন্দ খাওয়াদাওয়া, সিনেমা দেখা, বই পড়ার পাশাপাশি পিয়ানো বাজানো শিখছেন পিয়া।

করোনার কারণে এখন অনেক কাজই অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষ এ প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে নানা কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করছে। পিয়াও কি এ রকম কিছু করছেন? হ্যাঁ। ঘরে থাকলেও একদম বসে নেই এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘ঘরে বসেই অনলাইনে বেশকিছু ব্র্যান্ডিংয়ের প্রমোশনের কাজ করছি। আবার বেশকিছু ব্র্যান্ডের জন্য লাইভ অনুষ্ঠানও করছি।’

এছাড়া আরো কিছু অনলাইনভিত্তিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। কিছুদিন আগে ইউএসএআইডির জন্য নয় পর্বের একটি লাইভ অনুষ্ঠান করেছেন, যেখানে মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা থেকে শুরু করে অধ্যাপক, সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্বরা অংশ নিতেন। এখনো একটা লাইভ অনুষ্ঠান করছেন জানিয়ে পিয়া বলেন, ‘এখন একটা অনুষ্ঠান করছি মাই স্পোর্টস অ্যাপের জন্য, যেখানে শুধু ক্রিকেট তারকারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানটির নাম ক্রিকেট লাইভ আড্ডা।’

অভিনয় ও মডেলিংয়ের পাশাপাশি পিয়া একজন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী। কভিড-১৯ মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। করোনার কারণে এ অভিনেত্রীর অনেক কাজ থেমে আছে। ব্যবসায়িক দিক থেকে লোকসানও গুনতে হচ্ছে। পিয়া বলেন, ‘কভিড-১৯-এর কারণে কোর্টে যাওয়া হচ্ছে না। ব্যবসার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মডেলিংয়ের কিছু কাজ অনলাইনে হচ্ছে। সব মিলিয়ে করোনা কাজের ওপর অনেক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ব্যবসা ক্ষেত্রে।’

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে অনেক কাজই করতে পারতাম। কোর্টে যেতাম। ব্যবসা-বাণিজ্য আরো ভালো করে দেখা হতো। আরো বেশি শুটিং করা যেত। রেস্টুরেন্টে যেতে পারছি না। জিমে যাওয়া হচ্ছে না। ঘরে বসেই এসব করতে হচ্ছে। অনেক কিছুই ঘরকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। বাবা-মাকে দেখতে যেতে পারছি না। এ রকম অনেক বিষয় আছে, যেগুলো ছোট মনে হলেও আসলে অনেক বড়’—তিনি যোগ করেন।

পিয়ার মতে, করোনা নেতিবাচক অনেক প্রভাব ফেললেও পাশাপাশি ভালো অনেক কিছু শিখিয়েছে।‘কভিড-১৯ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। মৃত্যু ধনী-গরিব দেখে না। আগে কিছু হলেই আমরা বিদেশ চলে যেতাম। এখন তা হচ্ছে না। রক্তের বা আত্মার সম্পর্কও যে গুরুত্বপূণ এটাও শিখলাম। এখন আমরা পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারছি। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজকর্মগুলো এখন অনলাইননির্ভর হয়ে গেছে। অনেক ভালো জিনিসই শিখিয়েছে’—তিনি বলেন। এ সময় করোনাকালে নিজস্ব উপলব্ধির কথা জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘জীবনটা ছোট। আবার একই সঙ্গে জীবনে এমন কিছু করে যাওয়া উচিত, যেন জীবনটা বৃথা না যায়। করোনার মধ্যে সবার সেই চেষ্টাটা থাকা উচিত। কারণ মৃত্যু যেকোনো সময় আসতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। জীবনটা যেন বৃথা না যায়, এটা ভাবা গুরুত্বপূর্ণ।’

কভিড-১৯ যা শেখাচ্ছে সেগুলো যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা যায়, তাহলে আগামীতে একটা সুন্দর পৃথিবী মানুষ পেতে পারে বলে মনে করছেন জান্নাতুল পিয়া। একই সঙ্গে সুন্দর পৃথিবী পেলেও অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে বলেও তার ধারণা। এখনই অনেক মানুষ চাকরির সন্ধান করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে পিয়া মনে করছেন, ‘শুধু চাকরির ওপর নির্ভর না থেকে উপার্জনের ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপর নজর দেয়া উচিত। ছোট ছোট উদ্যোগ নেয়া, ব্যবসা শুরু করা উচিত। সেটা হতে পারে কৃষি উদ্যোগ গ্রহণ বা যেকোনো উপায়েই।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *