ইসলামের দৃষ্টিতে শিশুশ্রম, সুশোভিত ও গৌরবময় হোক প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ

ইসমাঈল আযহার: [২] ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার হচ্ছে গোটা সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক। সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে সঠিক ভূমিকা পালনের মৌলিক শিক্ষা লাভ করা হয় পারিবারিক পরিবেশে। তাই আমাদের সন্তানদের নিজ নিজ পরিমণ্ডলে শিশুকাল থেকেই নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ কর এবং তাদের আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ো।’

[৩] শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ইসলামে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। শিশুশ্রমের ফলে তাদের মননশীলতা ও দৈহিক ক্ষতি হয়। আজ যারা শিশু, ভবিষ্যতে তারাই যুবক। তারাই সুশোভিত ও গৌরবময় ভবিষ্যতের পথনির্দেশক। আজকের শিশুর মাঝেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।’ (আল কাহফ, আয়াত ৪৬)

[৪] ইসলামের বিধান হলো, পিতা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের উপার্জনের জন্য বাধ্য করতে পারবেন না। তিনি উপার্জন করতে পারলে করবেন, নতুবা ঋণ করে তাদের খরচের ব্যবস্থা করবেন, যেন তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও শিক্ষা চলাকালে পিতা তাদের খরচ চালিয়ে যাবেন। (ফাতাওয়া আলমগীরী : ১/৫৬১, রদ্দুল মুহতার : ৫/৩৪১)

[৫] বর্তমানে বেঁচে থাকার তাগিদে কিংবা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কোমলমতি শিশুদেরও প্রচুর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে। ফলে তারা নানা রকম শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি মৃত্যুবরণও করছে। শিশুশ্রম হলো সামাজিক শোষণের দীর্ঘস্থায়ী এক হাতিয়ার।

[৬] সমাজজীবনে বাস্তবতার নিরিখে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে পাশাপাশি পাড়াশোনা কম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। দারিদ্র্যের কারণে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া শিশুদের জানাতে ও বোঝাতে হবে যে তাদের দারিদ্র্য দূর করার মোক্ষম হাতিয়ার হলো শিক্ষা।

[৭] মুসলিম শরিফের এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের মহৎ করে গড়ে তোলো এবং তাদের উত্তম আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ অপর এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সন্তানকে আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া সম্পদ দান করা অপেক্ষা উত্তম।’ –বায়হাকি

[৮] ইসলাম শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে। মহান আল্লাহ আমাদের শিক্ষার আলো স্বরূপ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেছেন। কুরআন নাযিলের প্রথম শব্দই ছিল ‘ইক্বরা’ অর্থ পড়। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতির উন্নতি কল্পনা করা যায় না। জাগতিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের উন্নতি, অগ্রগতি ও সফলতার জন্য শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে শিশু অনেক গুণে বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমাদের শিশুরা যেন শিক্ষা ও শিষ্টাচারের আলোয় আলোকিত হতে পারে সেজন্য সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *