ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা কমানোর ঘোষণা ওয়াশিংটনের

আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সেনা উপস্থিতি গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নিয়ে আসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার এক ঘোষণায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন। খবর এএফপি।

ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস মিলার জানান, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আফগানিস্তান থেকে দুই হাজারের মতো সেনা প্রত্যাহার করা হবে। একই দিনে ইরাক থেকে ৫০০ সেনা ফিরিয়ে আনা হবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে মার্কিন সেনা সংখ্যা আড়াই হাজারে নেমে আসবে।

ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ বিরোধ শান্তিপূর্ণ ও সফল পরিণতিতে নিয়ে আসতে ট্রাম্প নীতি বাস্তবায়নে এ সেনা প্রত্যাহার হচ্ছে বলে জানায় পেন্টাগন। মিলার বলেন, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আল কায়েদার হামলার জবাবে শুরু হওয়া যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ হিসেবে দেখছেন শীর্ষ রিপাবলিকানরা। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে।

অনেক আগে থেকেই নিজের দেশের সেনাদের ফিরিয়ে আনার কথা বলে আসছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অন্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিষয়ে বরাবরই সমালোচনা করে আসছেন তিনি। এদিকে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল সব সময় ট্রাম্পকে সমর্থন করে এলেও সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনাকে তিনিও সমর্থন করছেন না। তার মতে এটা একটি ?‘ভুল’ সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতিতে আমূল পরিবর্তন এনে কোনো নীতি গ্রহণের বিষয়েও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন তিনি।

আফগানিস্তানে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার সৈন্য রয়েছে। আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে এ সংখ্যা কমিয়ে আড়াই হাজার করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অপরদিকে ইরাকে বর্তমানে সেনা রয়েছে তিন হাজার। এ থেকে সেনা কমিয়ে আড়াই হাজারে নামিয়ে আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি প্রত্যাশা করেন ক্রিসমাসের আগেই সেনারা সবাই দেশে ফিরে আসুন। তবে নির্বাচনের পর ট্রাম্প প্রশাসনে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন ট্রাম্প। নির্বাচনে ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন জো বাইডেন। অপরদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি ভোট। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে এর মধ্যেই বাইডেনকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নিজের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ট্রাম্প। এমনকি ক্ষমতা হস্তান্তরেও তার প্রশাসনের কোনো তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কারণ ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ট্রাম্প। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারকে বরখাস্তের ১০ দিনের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা এল। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তায় সেখানে মার্কিন সেনা উপস্থিতির পক্ষে অবস্থান করছিলেন এসপার।

ইরাকে মার্কিন দূতাবাস ও সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি রকেট হামলার ঘটনা ঘটলেও সেনা প্রত্যাহারে অটল রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

পেন্টাগনের এ সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রমাদ গুনছেন ওয়াশিংটনের মিত্র ও খোদ মার্কিন রাজনীতিবিদরা। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *