ইবি উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২০ আগস্ট

ইবি: আগামী ২০ আগস্ট শেষ হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বর্তমান উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ। কে হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী কর্ণধার, এরই মধ্যে তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের ও বাইরের প্রায় এক ডজন শিক্ষক এ পদের জন্য বিভিন্নভাবে তদবির চালাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এমনকি স্থানীয় এমপির কাছেও চলছে নিয়োগ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।

নতুন উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস হয়ে উঠছে সরগরম। তবে করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসের তুলনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে আলোচনার প্রধান মাধ্যম। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই পদকে ঘিরে বর্তমানে প্রকাশ্যে বিভক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

উপাচার্য নিয়োগকে ঘিরে বর্তমানে দু’টি গ্রুপের মধ্যে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। এক পক্ষ চাইছে, ১৩তম উপাচার্য হিসেবে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর পুনর্নিয়োগ। অপরপক্ষটি চাইছে, কোনোভাবেই যেন অধ্যাপক আশকারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে না পারেন।

উপাচার্যের পক্ষে অবস্থানকারী শিক্ষকরা শেষ সময়ে ব্যস্ত অধ্যাপক আসকারীকে পুনরায় উপাচার্যের চেয়ারে বসাতে। ওপর মহলে আসকারীর সুনাম বৃদ্ধির জন্য ওই শিক্ষক-কর্মকর্তারা ফেসবুকে সরব। অভিযোগ আছে, ওই শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অন্যন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, ডে-লেবার এমনকি শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোড় করে স্ট্যাটাস কমেন্ট করাচ্ছেন।

সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে বর্তমান উপাচার্যবিরোধী শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরূদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উপাচার্যবিরোধীদের অভিযোগ, উপাচার্য ও তার মদতপুষ্ট শিক্ষকরা তাদের ঠেকাতে এসব ভিত্তিহীন সংবাদ করিয়েছেন। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে উপাচার্য পক্ষের শিক্ষকরা আশাবাদী যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বর্তমান সরকার ড. আসকারীকে পুনরায় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, একজন সৎ, যোগ্য এবং সর্বপরি ছাত্র-শিক্ষকবান্ধব হবেন এমন উপাচার্যই প্রত্যাশা আমাদের। আমি মনে করি, সে দৃষ্টিকোণ থেকে আসকারী স্যার অনেকটা এগিয়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে যদি তিনি উপাচার্য হয়ে আসেন, তাহলে সেটা সবার জন্য মঙ্গল হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি অন্য কাউকে নিয়োগ দেন, সে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে আসেন, সেটাই প্রত্যাশা।

অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী যেন দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হয়ে না আসতে পারেন, সেজন্য ওপর মহলে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিরোধী গ্রুপের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, ড. রাশিদ আসকারী প্রথম মেয়াদে উপাচার্য হয়ে আসার পর এক বছর ভালোই চালাচ্ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বিতর্কিত শিক্ষকদের কাছে টেনে নিজেও বিতর্কিত হয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কাছে টেনে নিজেও এতে সম্পৃক্ত হয়েছেন।

বিরোধীদের আরো অভিযোগ, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছন। কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটি করা হলে, সেটা না মেনে আলাদাভাবে নিজের মদতপুষ্ট শিক্ষকদের দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটি করেছেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও শাপলা ফোরামে বিভক্তি সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ করছেন তারা।

এসব অভিযোগ এনে বিরোধীপক্ষ কুষ্টিয়ার এনএস রোডে উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধনও করেছে। আসকারী বাদে যে কেনো উপাচার্য এলে তারা সমর্থন দেবেন বলে জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ বাণিজ্যে, টেন্ডারবাজদের মূল হোতাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে ভেঙ্গে খণ্ড বিখণ্ড করেছেন। সুতরাং তাকে দ্বিতীয়বার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সমীচীন হবে না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *