ইন্টারনেট বন্ধে ভারতের ক্ষতি ২৮০ কোটি ডলার

রাজনৈতিক ইস্যু ও জনবিক্ষোভ দমনে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের প্রবণতা বেড়েছে। গত বছর কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও এমন ঘটনা ক্রমবর্ধমান ছিল। যে কারণে আর্থিক ক্ষতির অংকও বাড়ছে। গত বছর বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে একাধিকবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করায় শুধু ভারতের আর্থিক ক্ষতি ২৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে ২০২০ সালে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করেছে এমন ২১টি দেশের তালিকায় আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের নাম শীর্ষে উঠে এসেছে। অবশ্য গত বছর ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কারণে বৈশ্বিক আর্থিক ক্ষতির অংক কমে ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৯ সালে ৮০৫ কোটি ডলার ছিল। খবর ব্লুমবার্গ ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডিজিটাল প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি রিসার্চ গ্রুপ টপ১০ভিপিএনের ‘দ্য গ্লোবাল কস্ট অব ইন্টারনেট শাটডাউন ইন ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ভারতে একাধিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মোট ৮ হাজার ৯২৭ ঘণ্টা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ দেশ এখন ভারত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ দেশ হিসেবে বেলারুশ ও ইয়েমেনের নাম এসেছে। ২০১৯ সালে ইন্টারনেট বন্ধের আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় প্রথম ও দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ছিল যথাক্রমে ইরাক ও সুদান এবং তৃতীয় শীর্ষ দেশ ছিল ভারত। ইরাক ও সুদানে রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে হরহামেশাই সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। গত বছর একই চিত্র দেখা গেছে ভারতে।

গত বছর বেলারুশে একাধিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মোট ২১৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এসব ঘটনায় দেশটির ৭৯ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভুক্তভোগী হয়েছিলেন। গত বছর বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কারণে বেলারুশের আর্থিক ক্ষতি ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

গত বছর আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় তৃতীয় শীর্ষ দেশ ইয়েমেনে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মোট ৯১২ ঘণ্টা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এসব ঘটনায় দেশটির ৭৯ লাখ মানুষ ভুক্তভোগী ছিলেন। গত বছর বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কারণে ইয়েমেনের আর্থিক ক্ষতি ২৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

টপ১০ভিপিএনের তালিকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কারণে আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ দেশ হিসেবে যথাক্রমে মিয়ানমার ও আজারবাইজানের নাম এসেছে। গত বছর বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধে দেশ দুটির আর্থিক ক্ষতির অংক যথাক্রমে ১৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলার ও ১২ কোটি ২৬ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

টপ১০ভিপিএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা এখন একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার রাজনৈতিক ইস্যু চাপা দেয়া, জনবিক্ষোভ ঠেকানো ও কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের সংগঠিত হওয়া ঠেকাতে দেশজুড়ে কিংবা নির্দিষ্ট অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে রাখছে।

কভিড-১৯ মহামারী বিশ্ববাসীর সামনে কিছু মৌলিক পরিবর্তন দৃশ্যমান করেছে। নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিবেচনায় দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত। গত বছর ইন্টারনেট সেবা বন্ধে বৈশ্বিক আর্থিক ক্ষতির চার ভাগের তিন ভাগই ভারতে হয়েছে।

টপ১০ভিপিএনের ‘দ্য গ্লোবাল কস্ট অব ইন্টারনেট শাটডাউন ইন ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনের লেখক সিমন মিগলিয়ানো বলেন, সামপ্রতিক সময় ভারতে বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘটনা বেড়েছে। গত বছর দেশটিতে বিভিন্ন সময় শতাধিকবারের বেশি ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। তবে গত বছরের শেষদিকে ভারতে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধের অনেক ঘটনাই প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৮ সালের এপ্রিলে সবশেষ ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন্স’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২-১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধে ভারতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০৪ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। একই সময় দেশটিতে ১৬ হাজার ৩১৫ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল।

গত বছর শুরুর দিকে রয়টার্স ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বারবার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করায় দেশটির সেলফোন অপারেটরগুলো প্রতি ঘণ্টায় ২ কোটি ৪৫ লাখ রুপি (৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার) রাজস্ব লোকসান দিচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হতে সাধারণ মানুষ ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ফেসবুকের মতো সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার করছে। যদিও রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের সরকারের ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করাদের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *