ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন: জেলায় একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নয়

জেলা পর্যায়ে একের অধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দেয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া কলেজে ও মাদ্রাসায় অনার্স-মাস্টার্স কার্যক্রম হ্রাস এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অভিন্ন আইনের অধীনে পরিচালনার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে ইউজিসি যে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেছে, তাতে উল্লিখিত তিনটিসহ ২৪টি সুপারিশ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিবেদন আকারে চ্যান্সেলরের কাছে তুলে ধরা সংস্থাটির দায়িত্ব। এ প্রতিবেদন সংসদেও পেশ করা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ইউজিসি সুপারিশ করেছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষার জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি।’
কামরুল হাসান মামুন: দেশটা আসলে ৮০-৯০% আম জনতার নেতৃত্বে চলে গেছে ≣ ফায়সাল করিম : চীনে মধুর শিক্ষাজীবন, শেষ হলো বিষাদে ≣ [১] কার্যকারিতা পরীক্ষায় বিএসএমএমইউকে কিটের নমুনা হস্তান্তর গণস্বাস্থ্যের

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকার উচ্চশিক্ষাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে তদারককারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইউজিসির মতামত গ্রহণ করতে পারে সরকার। পাশাপাশি একই জেলায় নতুন করে একের অধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া বন্ধ করা যেতে পারে।’

ইউজিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশে বর্তমানে কার্যকর ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডজনখানেক মান নিশ্চিত করছে। বাকিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুরবস্থায় আছে জেলা পর্যায়ে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলো। গত ৫ বছরে ইউজিসি যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করেছে তার সবই জেলা পর্যায়ে অবস্থিত। খরচ বাঁচাতে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করছে না। এমনিতে এ ধরনের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা শিক্ষকে চলছে। আবার ভাড়া করতে গেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণা তো হয়ই না। তাই জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দেয়াই উচ্চশিক্ষা বা দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাবরেটরি-লাইব্রেরির ঘাটতি থাকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে এবং আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের অবস্থা দেখে তা হ্রাস এবং নতুন প্রোগ্রাম অনুমোদনে সার্বিক সক্ষমতা বিচার করতে হবে।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যথাযথ শর্ত পূরণ না করার পরও বিভিন্ন সময়ে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স খোলার অনুমতির সুপারিশ করেছেন। ভিসিসহ নীতি-নির্ধারকরাও নানা সময়ে রহস্যজনক কারণে ওই সুপারিশেই আস্থা রেখেছেন। এ কারণে গ্রাম-গঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এসব কোর্স পেয়েছে। ফলে কলেজ পর্যায়ের অনার্স-মাস্টার্স প্রোগ্রামের উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে অর্ধশত পাবলিক ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৪৬টি পাবলিক ও ৯৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের কার্যক্রম নিয়ে ডিসেম্বরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন সুপারিশের মধ্যে আছে, গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘সান্ধ্যকালীন’, ‘উইকেন্ড’ ও ‘এক্সিকিউটিভ’ ইত্যাদি নামে পরিচালিত কোর্স বন্ধ করতে হবে। কেননা এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে ডিপ্লোমা, সংক্ষিপ্ত কোর্স, ভোকেশনাল কোর্স, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও খণ্ডকালীন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম পরিচালনার অনুমতি দেয়া যেতে পারে।

সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাকাজে চৌর্যবৃত্তি বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষার গবেষণাপত্রে চুরি ধরতে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। ১৯৭৩ সালের আদেশে পরিচালিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোর জন্য একটি অভিন্ন আইন করতে হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *