ইইউতে যুক্তরাজ্যের রফতানি ৬৮ শতাংশ পতন

চলমান মহামারীতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাপক সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে। এমন সংকটের মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে এ প্রভাব দ্বিগুণ হয়েছে। ব্রিটিশ সাপ্তাহিক দি অবজারভারে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাসে ব্রিটেন থেকে ইইউর দেশগুলোয় রফতানি ৬৮ শতাংশ পতন হয়েছিল। পণ্য পরিবহন সংস্থা রোড হোলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (আরএইচএ) একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর এএফপি।

১ জানুয়ারি ব্রিটেন পুরোপুরি ইইউ ছেড়ে যাওয়ার পর নতুন চেক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ব্রিটিশ পণ্য রফতানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরএইচএর প্রধান নির্বাহী রিচার্ড বারনেট ব্রিটিশ মন্ত্রী মাইকেল গভকে চিঠি পাঠিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বারবার সতর্ক করেছিলেন এবং সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো প্রতিক্রিয়া কিংবা সমাধান পাওয়া যায়নি।

বারনেট বলেন, যদিও অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণের জন্য সরকার সীমান্তে প্রায় ২০ শতাংশ কর্মী নিয়োগ করেছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এটি যথেষ্ট নয়। ছয় মাস ধরে আমরা মাইকেল গোভের কাছে চিঠি পাঠিয়ে আসছি। কিন্তু তিনি কোনোবারই আমাদের লিখিতভাবে সাড়া দেননি।

বারনেট গত বছরজুড়েই বলে আসছিলেন, পর্বতসম অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রক্রিয়ায় সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে শুল্ক এজেন্টের সংখ্যা বাড়ানো অতিজরুরি। বেড়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ কাগজ প্রক্রিয়াকরণের জন্য তিনি যে পরিমাণ কর্মী বাড়ানোর কথা বলেছিলেন, তা বর্তমানে থাকা ১০ হাজারের তুলনায় আরো পাঁচ গুণ বেশি।

রফতানিতে ৬৮ শতাংশ পতন ছাড়াও যুক্তরাজ্যে পণ্য রেখে ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ যানবাহন ইইউতে খালি ফিরে যাচ্ছে। কারণ যানবাহনগুলোয় পাঠানোর জন্য কোনো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রেক্সিট কার্যকরের পর নানা জটিলতার কারণে বেশকিছু ব্রিটিশ সংস্থা ইইউতে সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে।

বারনেট বলেন, এখানে গভীর হতাশা ও বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রীরা এ শিল্প ও বিশেষজ্ঞদের কথা না শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হাউজ অব কমন্সের লাইব্রেরি অনুসারে, যুক্তরাজ্য ২০১৯ সালে ইইউতে ২৯ হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের পণ্য রফতানি করেছিল। এটি যুক্তরাজ্যের মোট রফতানির ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে ইইউ ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের রফতানি করেছিল, যা দেশগুলোর মোট রফতানির ৫২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ রফতানি উড়োজাহাজের পরিবর্তে বন্দরগুলো দিয়ে যায়।

ব্রিটিশ পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড ব্যালান্টিন বলেন, কাগজপত্রের জটিলতার কারণে ৬৮ শতাংশ রফতানি হ্রাস অনেক বেশি শোনাচ্ছে। অতিরিক্ত কাগজপত্রের কারণে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছিল, তবে সেটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাটিয়ে ওঠা গেছে। যদিও ইউরোপীয় বাজারের সঙ্গে কিছু ব্যবসায় সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের পরিবর্তে যুক্তরাজ্য এখন নতুন বাজার সন্ধানে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।

এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রেক্সিট ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সরকার এখন অতিরিক্ত ছয় মাস ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ আগামী জুলাই পর্যন্ত কাগজপত্রের জটিলতা স্থগিত করা হচ্ছে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রফতানিতে এমন তীব্র হ্রাসের অন্যতম কারণ হলো ব্রেক্সিট ও মহামারী। বেশ কয়েকটি ট্রেড সংস্থা আশঙ্কা করছে, পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। কোল্ড চেইন ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী শেন ব্রেনান বলেন, আমরা এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত একটি ঝড়ের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা করছি। লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার সংকটময় এ সময়ে যুক্তরাজ্য ইইউর অনেক পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাজ্যে ব্যবসা প্রস্তুত নয়। আমরা পূর্ণ ব্রেক্সিট সংকটের যে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, তা এ মুহূর্তে কার্যকর হতে পারে।

একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। রফতানি ব্যাহতের পরিমাণ এতটা নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। সীমান্তে এখন পর্যন্ত বিঘ্ন ন্যূনতম হয়েছে। তাছাড়া কভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও পণ্য পরিবহন এখন স্বাভাবিক স্তরের কাছাকাছি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *