আমল বা ইবাদত কত প্রকার ও কি কি

ওয়ালি উল্লাহ : ইবাদত প্রথমমত চার প্রকার- নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। পৃথিবীর লাভ-লালসার মধ্যেও মানুষ যেন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের কথা ভুলে না যায় তাই দৈনিক পাচবার নামাজ আদায় করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। নিজের মধ্যে তাকওয়া এবং সংযম অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বছরে একমাস রোজা রাখার নির্দেম দেয়ার হয়েছে। সামর্থ্যবাদ ব্যক্তি প্রতি বছর নিজ অর্থসম্পদ থেকে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ এবং উৎপন্ন শস্যের দশ ভাগের এক ভাগ অথবা ক্ষেত্রভেদে বিশ ভাগের এক ভাগ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রদান করার ইসলামী বিধান রয়েছে। এমনিভাবে বৃত্তবান হলে জীবনে এশবার হজ আদায় করা ইসলামের বিধান।

খ. মুআমালাত-লেনদেন: মুআমালাত তথা লেনদেনের ক্ষেত্রে আমানতদারী ও সততা ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষাসমূহের অন্যতম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়. যে ব্যক্তি নিজের লেনদেন ও কাজ-করবারে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত, অঙ্গিকার পূর্ণ করে, মানুষকে ধোকা দেয় না, আমানতের খিয়ানত করেন না, মানুষের হক নষ্ট করে না, ওজনে কম দেয় না, মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয় না এবং সুদ-ঘুষসহ যাবতীয় অবৈধ রোজগারর থেকে নিজেকে রক্ষঅ করে চলে, এই হল প্রকৃত মুসলিম। এ কারণেরই লেনদেনে সততা ও আমানতদারী রক্ষা করে চলার প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

গ. মুআশারাত-আচার আচরণ : মুআশারাত তথা সামাজিক জীবনের আচার আচরণে যাতে শিষ্টাচারের বাহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং মানুষ ভাই ভাই হিসেবে বসবাস করতে পারে, সে জন্য ইসলাম এ বিষয়ের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

ঘ. সিয়াসাত-রাষ্ট্রনীতি : ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ দীন, তাই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও ইসলাম নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ইসলামে রাষ্ট্রনীতি ধর্ম থেকে বিছিন্ন কোন বিষয় নয়। রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ন্যায়ের শাসন প্রদান একান্ত আবশ্যক। অনুরূপ দেশ ও জাতির নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে সামরিক শক্তি অর্জন ও প্রয়োজনে সেনা অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামী বিধানের বাস্তবায়ন অবশ্যম্বাবী।

ঙ. ইক্তিসাদিয়্যাত-অর্থনীতি : অর্থ উপার্জন ও ব্যয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি কিভাবে পরিচালনা করতে হবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহপাকের বিধান মেনে চলা একান্ত আবশ্যক। অর্থনৈতিক জীবনে যাতে ভারসাম্য ক্ষুণ্ন না হয় সেজন্য শরীযাতের সীমালঙ্ঘন করে আপন প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি মুতাবিক উপার্জন ও ব্যয় করাকে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হালাল-হারামের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। শ্রমিকের মজুরী নিশ্চিত করা হয়েছে। গরীব যেন অনাহারে-অর্থাহারে মারা না যায় সেজন্য জাকাত, উশর, খারাজ ইত্যাদিও বিধান জারী রকা হয়েছে।

চ. দাওয়াত ও জিহাদ : ইসলাম শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা। এই দিনকে টিকিয়ে রাখতে হলে দাওয়াতের কোন বিকল্প নেই। দাওয়াত মানে পথহারা মানুষকে আল্লাহর দিকে, সিরাতে মুস্তাকীমের দিকে আহবান করা। বস্তুত হজরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে যত নবী-রাসূল এ পৃথীবিতে এসেছেন সকলেই এ দাওয়াতের আমল করেছেন। কুরআন ও হাদিসে এই দাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। দওয়াতের পাশাপাশি জিহাদ ও ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। জীবনের সর্বক্ষেত্রে দীনের নির্দেশসমূহ জিন্দা করা এবং ইসলামের অনুশাসন মেলে চলা যেমন একজন মুমিনের দায়িত্ব অনুরূপভাবে দীনের হেফাজতের জন্য জান-মাল উৎসর্গ করে জিহাদের ময়দানে ঝাপিয়ে পাড়াও একান্ত কর্তব্য।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *