আগামী বছর সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি বাড়বে ৮.৪%

কভিড-১৯ মহামারীর নতুন বাস্তবতায় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে অনলাইন ক্লাস ও রিমোট ওয়ার্ক সুবিধার কারণে মোবাইল ডিভাইসের বিক্রি বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে ডিভাইস নির্মাতারা উৎপাদন জোরদার করেছে। যে কারণে আগামী বছর বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের বিক্রিতে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (এসআইএ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর টেলিকম লিড।

এসআইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর সেমিকন্ডাক্টর বিক্রির অংক ৪৩ হাজার ৩১০ কোটি ডলারে পৌঁছবে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। তবে চলতি বছর অঞ্চলভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর বিক্রিতে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এশিয়া প্যাসিফিকে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি বছর জাপান ও ইউরোপে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট এবং ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

শুধু গত অক্টোবরেই সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। গত সেপ্টেম্বর এবং গত বছরের অক্টোবরে বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার এবং ৩ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার।

এসআইএর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জন নিউফার বলেন, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রিতে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। তবে সেমিকন্ডাক্টর বাজার উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে আগামী বছর। এ প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য; বিশেষ করে মোবাইল ডিভাইসের উল্লেখযোগ্য চাহিদা।

গত এপ্রিলের শেষদিকে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের আয় কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধের জেরে গত বছরজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর বিক্রিতে শ্লথগতি বিরাজমান ছিল। যে কারণে গত বছর সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি থেকে আয় ৪১ হাজার ৯১০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ১২ শতাংশ কম।

গার্টনার জানায়, গত বছরজুড়ে মেমোরি চিপের বাজার নিম্নমুখী থাকায় সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্যামসাংয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় ভেন্ডরের আয় কমেছে, এমনকি তা আগের দুই বছরের চেয়েও কম। তবে গত বছর সেমিকন্ডাক্টর বাজারে স্যামসাং খারাপ সময় পার করলেও ইন্টেলের জন্য দারুণ কেটেছে। মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি গত বছর বাজারে শীর্ষ অবস্থান পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারের শীর্ষ অবস্থান দখলে রেখেছিল স্যামসাং ইলেকট্রনিকস।

ওই সময় গার্টনারের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রুু নরউড বলেন, গত বছর ডিআরএএম (ডাইন্যামিক র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি) চিপের অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে সামগ্রিকভাবে মেমোরি চিপ বাজার ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ পড়ে যায়। গত বছর মোট যে পরিমাণ সেমিকন্ডাক্টর বিক্রি হয়, তার ২৬ দশমিক ১ শতাংশ ছিল মেমোরি চিপ।

সামগ্রিকভাবে গত বছর সেমিকন্ডাক্টর বাজারের ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ এনএএনডি মেমোরি চিপের দখলে ছিল। তবে মেমোরি বিক্রি থেকে গত বছর আয় কমেছে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর ডিআরএএম মেমোরি চিপ বিক্রি থেকে আয় কমেছে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডিভাইসগুলোর জন্য চিপের চাহিদা। এর ফলে সম্প্রসারণ হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বা চিপের বাজার। ক্রমবর্ধমান এ খাতের রাজস্বে ২০১৮ সালের আগে টানা তিন বছর উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে গত বছরের প্রথমার্ধে খাতটির রাজস্ব হ্রাস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, গত বছর বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাতের রাজস্ব সংকুচিত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, মূল ধারার ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের দুর্বল চাহিদা, বিভিন্ন অঞ্চলের মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী ডলার এবং নতুন উদ্ভাবন কমে আসা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *