আইফোন সরবরাহে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির পূর্বাভাস

চলতি প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আইফোন সরবরাহ এক বছর আগের একই সময়ের চেয়ে ২১ শতাংশ বেড়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। আইফোন ১২ সিরিজের চারটি ডিভাইসে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থন এনেছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল, যা বিক্রি প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ইটি টেলিকম।

অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগ টানা কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। আইফোনকেন্দ্রিক মৌলিক উদ্ভাবনের ঘাটতি এবং গ্রাহক পর্যায়ে ডিভাইস আপগ্রেডের প্রবণতা কমে যাওয়ায় আইফোন বিক্রি টানা কয়েক বছর ধরে কমছে। চলতি বছর আইফোন বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত লকডাউনে আইফোন উৎপাদন এবং সরবরাহ দুটোই ব্যাহত হয়। এছাড়া সংকট ছিল আইফোনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও চিপসের। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে চুক্তিভিত্তিক আইফোন উৎপাদনকারীদের কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে অ্যাপল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি প্রবৃদ্ধিতে শুধু উত্তর আমেরিকার বাজার নয়; ভারত, চীন, জাপান এবং ইউরোপের দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব বাজারের কয়েকটিতে এরই মধ্যে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। কয়েকটি বাজার ফাইভজি চালুর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গবেষণা বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান পিটার রিচার্ডসন বলেন, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক এবং আগামী বছর আইফোন বিক্রিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধির কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আইফোনে ফাইভজি প্রযুক্তি সংযোজন। এছাড়া গ্রাহকরা যাতে তুলনামূলক কম দামে হাই-এন্ড ফিচার সংবলিত আইফোন ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য প্রতি বছর একটি সাশ্রয়ী আইফোন উন্মোচনের কৌশল। অ্যাপল টানা কয়েক বছর ধরে আইফোনের একটি সাশ্রয়ী সংস্করণ উন্মোচন করে আসছে। চলতি বছর আইফোন ১২ সিরিজের আওতায় একটি সাশ্রয়ী মডেল আনা হয়েছে।

আইফোন ডিভাইস নিয়ে আগামী বছরের ব্যবসা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে অ্যাপল। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আগামীতে আইফোনের চাহিদা বাড়বে। গ্রাহক চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছরের তুলনায় আগামী বছরজুড়ে তাদের আইফোন উৎপাদন ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে আইফোনের উৎপাদন ভবিষ্যতে আবারো সামঞ্জস্য করা হতে পারে। যদিও স্মার্টফোন শিল্পে যন্ত্রাংশ সরবরাহে ঘাটতি থাকায় অ্যাপল তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।

অ্যাপলের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক সরবরাহকারীদের আগামী বছরের প্রথমার্ধের জন্য ৯ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৯ কোটি ৬০ লাখ ইউনিট আইফোন উৎপাদনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব ডিভাইসের উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে তালিকায় আইফোন ১২ সিরিজের নতুন চার ডিভাইসের পাশাপাশি আইফোন ১১ ও সাশ্রয়ী আইফোন এসই রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে একাধিক মডেলের ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। তবে এতদিন পিছিয়ে ছিল প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। আইফোনপ্রেমীদের ফাইভজি ডিভাইসের প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে চলতি বছর আইফোনের চারটি সংস্করণে ফাইভজি সমর্থন এনেছে, যা অ্যাপলের রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মরগান স্ট্যানলির এক প্রতিবেদনে আগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে চলতি বছরের শেষদিকে ফাইভজি সমর্থিত প্রথম আইফোন উন্মোচন করা হতে পারে, যা এখন বাস্তবে রূপ পেয়েছে। একই সময় বলা হয় অ্যাপলের ২০২১ হিসাব বছরের আর্থিক খতিয়ানে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কারণ হবে ফাইভজি সমর্থিত আইফোন। অ্যাপল এরই মধ্যে পরিবেশক চ্যানেল পার্টনারদের সঙ্গে কার্যক্রম শুরু করেছে। আইফোনে ফাইভজি সমর্থন আনার পাশাপাশি বিক্রি বাড়াতে নানা কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *