অ্যাপলের ৩ ন্যানোমিটার চিপ তৈরি করবে টিএসএমসি

বহুজাতিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির প্রসেসর চিপ তৈরি করবে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড (টিএসএমসি। বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি ৩ ন্যানোমিটার উন্নত প্রযুক্তির চিপ তৈরির জন্য অ্যাপলের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছে, যা টিএসএমসির ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।

অ্যাপল নিজেদের পরবর্তী আইওএস এবং সিলিকন ডিভাইসে ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি উন্নত প্রসেসর চিপ ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকে একমাত্র চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা হিসেবে টিএসএমসি এরই মধ্যে ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির চিপ তৈরিতে বড় অংকের বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, উন্নত প্রসেসর চিপ তৈরির জন্য আগে থেকে উৎপাদন অংশীদার টিএসএমসিকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান মনে করেছে অ্যাপল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে প্রসেসর চিপ তৈরির লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সনদ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে টিএসএমসি। যে কারণে আগামী বছর থেকে আরো উন্নত চিপের পরীক্ষামূলক উৎপাদন এবং ২০২২ সালে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বছরে ছয় লাখ চিপ তৈরির সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে টিএসএমসি।

তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি বেশির ভাগ ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের জন্য ৫ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির প্রসেসর চিপ তৈরি করে আসছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে চিপ তৈরির কার্যক্রম জোরদার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিভাইসে নিজস্ব নকশার চিপ ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ায় এখন লাভবান হচ্ছে টিএসএমসি।

টিএসএমসি অ্যাপলের এ১৪ বায়োনিক এবং এম১ চিপ তৈরি করে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে আইপ্যাড এবং ম্যাকবুক ডিভাইসে ৩ ন্যানোমিটার প্রসেসর ব্যবহার করা হবে। পরবর্তী সময়ে আইফোনেও একই প্রসেসর চিপ ব্যবহার করা হবে। সম্প্রতি এআরএমভিত্তিক এম১ সিলিকন চিপ ব্যবহার শুরু করেছে অ্যাপল। টিএসএমসির ৫ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি এ চিপগুলো নতুন ম্যাকে ব্যবহার করেছে অ্যাপল।

চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদনে ক্রমে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে টিএসএমসি। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির চিপ বিক্রি বেড়েছে ২২ শতাংশ, যা প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে টিএসএমসির রাজস্ব ৩৫ হাজার ৬৪০ কোটি তাইওয়ানিজ ডলারে (১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার) পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই প্রান্তিকের ২৯ হাজার ৩০০ কোটি তাইওয়ানিজ ডলারের চেয়ে বেশি। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড মাইক্রোইলেকট্রনিকস করপোরেশন ও মিডিয়াটেক ইনকরপোরেশনেরও রাজস্ব বেড়েছে। তবে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল টিএসএমসি।

টিএসএমসি সম্ভাব্য রাজস্ব প্রবৃদ্ধির বিষয়ে গত জুলাইয়েই পূর্বাভাস দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে চলতি বছরের জন্য ২০ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। টিএসএমসির চলতি বছরের প্রথম নয় মাসের আর্থিক ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের প্রধান চিপ নির্মাতা কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ট্র্যাকে রয়েছে। ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে বাসায় কম্পিউটিং ডিভাইসের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির কম্পিউটিং ডিভাইস নির্মাতারা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে কাজ করছে। এর ফলে চিপের চাহিদা বেড়েছে, যা টিএসএমসির চিপ বিক্রি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের কাছ থেকে নতুন চিপ ক্রয়াদেশ নেয়া স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে টিএসএমসি। এর ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে টিএসএমসি চিপ ক্রয়াদেশ ঘাটতির মুখে পড়েছে। তবে ক্রয়াদেশ ঘাটতি খুব দ্রুত পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে টিএসএমসি। বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের কাছে চিপ বিক্রি করতে না পারলেও খুব বেশি সংকট সৃষ্টি হবে না বলে আগেই দাবি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *