অবকাঠামো খাতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণটা স্পষ্ট—আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর এ সময় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে নির্বাচনী প্রচারণায় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন ট্রাম্প। এ কারণে উত্তরণ প্রক্রিয়া জোরালো করতে অবকাঠামো খাতে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলার ব্যয়ের নতুন একটি পরিকল্পনা সাজাচ্ছে তার প্রশাসন। বর্তমানে মার্কিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরির কাজ করছে বলে ওয়াকিবহাল সূত্র জানিয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।

সূত্রটি জানিয়েছে, নতুন প্রণোদনার সিংহভাগই বরাদ্দ থাকবে সড়ক ও সেতু উন্নয়নের মতো প্রথাগত অবকাঠামো কাজের জন্য। এছাড়া তারবিহীন ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণ ও গ্রামীণ এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্যও প্রণোদনার একটি অংশ বরাদ্দ রাখা হবে।

হোয়াইট হাউজের কাছে নতুন পরিকল্পনাটির খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জুড ডিরি বলেছেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দলমত নির্বিশেষে অবকাঠামো প্যাকেজ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।’

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান অবকাঠামো তহবিল বরাদ্দ-সংক্রান্ত আইনে পরিমার্জন আসার কথা রয়েছে। নবায়নের এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এ খাতে আরো বড় আকারের প্রণোদনা বরাদ্দের পথ তৈরি হবে।

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আরোপিত লকডাউনের কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে কখন এ ব্যয় করতে হবে এবং এর আকার কেমন হবে, তা নিয়ে উভয় দলের আইনপ্রণেতা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন। এমনই এক পরিস্থিতিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তাদের খসড়া পরিকল্পনাটি তৈরি করছে।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য ৫০ হাজার কোটি ডলারের অবকাঠামো তহবিলের প্রস্তাব করেছেন। এদিকে অবকাঠামো ব্যয়ের মতো প্রবৃদ্ধি সহায়ক কার্যক্রমে রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে কীভাবে আরো বেশি বরাদ্দ দেয়া যায়, তা খতিয়ে দেখছে হোয়াইট হাউজ।

সামনে আসছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মৌসুম। এমনই এক সময়ে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চারের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। কারণ দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে তার অন্যতম হাতিয়ার অর্থনীতি। মাস চারেক আগে এর জোরেই তিনি সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে পেছনে ফেলেছিলেন বিভিন্ন জনমত জরিপে।

ট্রাম্প বরাবরই অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়ানোর কথা বলে আসছেন। ২০১৬ সালে নিজের নির্বাচনী প্রচারণায়ও এ বিষয়টিকে সামনে এনেছিলেন তিনি। আর নভেল করোনাভাইরাস ভালোভাবে জেঁকে বসার পর গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক, সেতু ও টানেল উন্নয়নে প্রায় ২ লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

নীতিনির্ধারকরা বরাবরই অবকাঠামো ব্যয়কে প্রবৃদ্ধি সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন। করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে এ ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান আরো জোরালো হচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব সানফ্রান্সিসকোর প্রেসিডেন্ট ম্যারি সি ড্যালিও অবকাঠামো খাতে পূর্ত ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি এমন প্রকল্প গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যেগুলো স্বল্প আয়ের মানুষদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

ব্যয় বাড়ানোর কথা তো বলা হচ্ছে। কিন্তু যে প্রশ্নটি আইনপ্রণেতাদের জন্য বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো, এ ব্যয়ের জন্য তহবিল আসবে কোথা থেকে? এই অর্থায়ন প্রতিবন্ধকতার কারণেই এর আগে কয়েক দফার পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। ফেডারেল গ্যাস ট্যাক্স বাড়িয়ে যে এই ব্যয় প্রকল্পের তহবিল জোগাড় করা হবে, তাও সম্ভব না। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান গ্যাসের দাম কম রাখার পক্ষে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *