বহুদিন ধরেই জাতীয় দলে কোনো কার্যকর স্ট্রাইকার নেই। ফলে অনেক চেষ্টা করেও খুব বেশি গোল দিতে পারে না বাংলাদেশ। মাঝমাঠ শক্তিশালী হলেও স্ট্রাইকার ব্যর্থতায় সাফল্য পাচ্ছে না জাতীয় দল। এই সমস্যা দূর করতে চান সদ্য বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া এলিটা কিংসলে। এই নাইজেরিয়ান স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের হয়ে খেলার, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য এনে দেয়ার। কিন্তু তিনি কি সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের জার্সিতে-এমন প্রশ্ন এসে যায় স্বাভাবিকভাবেই। জাতীয় ফুটবল দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডে তার ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে তার আগে লীগে কিংসলেকে পারফর্মমেন্স দেখাতে বললেন বাংলাদেশ দলের এই বৃটিশ কোচ।
২০১১ সালে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের জার্সিতে বাংলাদেশ অধ্যায় শুরু কিংসলের। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, বিজেএমসি হয়ে সর্বশেষ বাতিল হওয়া মৌসুমে আরামবাগের হয়েই খেলেন ৩১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। করোনার কারণে লীগ বাতিল হওয়ার আগে আরামবাগের মতো খর্বশক্তির দলে খেলেও ৫ ম্যাচে ৫ গোল করে তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। ২০১২ সালে বাংলাদেশি তরুণী লিজাকে বিয়ে করেন কিংসলে। যদিও চলতি মৌসুমে কিংসলেকে এখনো কোনো ক্লাবের জার্সিতে দেখা যায়নি। জানা যায়, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপের কারণেই কোনো ক্লাবে নাম লেখাননি এই ফরোয়ার্ড। ২০১৫ সালে নাগরিকত্বের আবেদনের পর প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে গত বছর তাকে শর্ত দেয়া হয়, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে আগে বাতিল করতে হবে নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব। সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই গত বছর দলবদলের আগে নাইজেরিয়ায় ফিরে যান তিনি। আশা ছিল, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে স্থানীয় ফুটবলার হিসেবেই খেলবেন ঘরোয়া ফুটবলে। অবশেষে সে নাগরিকত্বের সনদ তিনি হাতে পেয়েছেন গত রোববার। বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তিনি। এর আগে এলিটা কিংসলেকে বাতিল করতে হয়েছে জন্মসূত্রে পাওয়া নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব। সনদ পেয়ে খুশি কিংসলে বলেন, ‘অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো। আমি এখন আপনাদের মতোই বাংলাদেশের একজন মানুষ। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য গত পাঁচ বছর অনেক কষ্ট করেছি। আমার স্ত্রী-সন্তানেরাও খুব খুশি। তাদের বাবা এখন বাংলাদেশের- আমার সন্তানদের আনন্দ দেখে আরও বেশি ভালো লাগছে। এখন আমার লক্ষ্য লাল-সবুজ জার্সিতে মাঠে নামার। নেপালে তিন জাতি ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে যাবে বাংলাদেশ দল। এ উপলক্ষে চলছে জাতীয় দলের অনুশীলন। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে কোচ জেমি ডের কাছে কিংসলের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় জেমি বলেন, ‘বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যে কেউ জাতীয় দলে খেলার জন্য বিবেচিত হতে পারে। বিদেশি কেউ নাগরিক হলেই যে সুযোগ পাবে, ব্যাপারটা এমন নয়। নিজেকে প্রমাণ করে, স্থানীয়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েই তাকে সুযোগ করে নিতে হবে। তবে আমি তার ব্যাপারে ইতিবাচকই।’ ৩১ বছর বয়সী এলিটা কিংসলেকে জেমি খুব ভালো করেই চেনেন। তার সম্পর্কে এই বৃটিশ কোচ বলেন, ‘আমি ওকে গত মৌসুমে আরামবাগের হয়ে খেলতে দেখেছি। সে কয়েকটি গোলও পেয়েছে। তবে এখন কী অবস্থায় আছে, সেটি দেখতে হবে।’
আগামী জুনে কাতারে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তিন ম্যাচ। সে দলে ঢুকতে হলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে কিংসলেকে। এপ্রিলে শুরু হবে লীগের দ্বিতীয় লেগ। কিংসলে দ্বিতীয় লেগে পারফরম্যান্স করতে পারলে বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে চাপাতে পারবেন। সে পথ পরিষ্কার করতে চলতি লীগের শীষ দল বসুন্ধরা কিংসে নাম লেখাচ্ছেন এলিটা কিংসলে।