ভারতের বেশির ভাগ এলাকায় ১৫ মে পর্যন্ত সিনেমা হল বন্ধ থাকছে। ধারণা করা যায় এ নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়বে। এ পরিস্থিতি বলিউডের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে। কারণ ছবিগুলোর আয়ের একটা বিরাট অংশ আসে হলের টিকিট বিক্রি থেকে।
ফেব্রুয়ারিতে ভারতে সিনেমা হল খুলে দেয়া হয়েছিল। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন রাজ্যে সিনেমা হল বন্ধ হতে থাকে। সঙ্গে আরেকবার অনিশ্চয়তায় বলিউড।
ট্রেড অ্যানালিস্ট করণ তৌরানি ভারতের মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট দুনিয়াকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন। তার মতে, এ বছর প্রথম ছয় মাসে বলিউডের বাণিজ্যে কোনো আশা নেই। সেপ্টেম্বর থেকে বাজার পুনরুদ্ধার শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, ‘শুরুতে মনে হয়েছিল ২০১৯ সালের (প্রাক-কভিড সময়) তুলনায় ২০২১ এ বলিউডের রাজস্ব কমবে ২৫-৩০ শতাংশ এবং এটা বলা যায় পরিস্থিতি অনুযায়ী ভালো ব্যবসা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আয় কমবে ৬০-৭০ শতাংশ।’
গত কয়েক মাসে দক্ষিণের সুপারস্টার বিজয়ের মাস্টার ও হলিউডের গডজিলা ভার্সেস কংয়ের সাফল্য ভারতের বক্সঅফিসে আশা জাগিয়েছিল। মাস্টার আয় করে ২০০ কোটির বেশি আর গডজিলা ভার্সেস কং ভারতে ব্যবসা করে ৪৬ কোটি রুপির।
বলিউডের অন্যতম পাওয়ার হাউজ যশ রাজ ফিল্মস এ বছর তাদের বড় পাঁচটি ছবি মুক্তির তারিখ ঘোষণা করেছিল, যা বলিউডের বক্সঅফিসকে চাঙ্গা করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারত। অন্যান্য ফিল্ম স্টুডিও ও প্রযোজকরাও তাদের ছবির মুক্তির তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। এর মধ্যে আছে রণবীর সিংয়ের এইটিথ্রি, জন আব্রাহামের সত্যমে জয়তে টু। কিন্তু এখন এসব সময়সূচি বদলে গেছে এবং সর্বোপরি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
করণ তৌরানি বলেন, ‘সব ছবির মুক্তির তারিখ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে এবং এখন আবার নতুন করে এসব তারিখ ঘোষিত হবে।’
ভারতের সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন এ সংকট বলিউডের জন্য আরো বেশি গভীর। কারণ পরিস্থিতি আরো ভালো হবে এমন আশায় গত কয়েক মাসে বলিউডে আটকে থাকা গত বছরের বড় ছবিগুলো মুক্তি দেয়া হয়নি। হল খুলেছিল গত বছর অক্টোবরেই। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে কিংবা দর্শকদের হলমুখী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
ভারতের একটি মিডিয়া কনসালটিং ফার্ম ওরম্যাক্স মিডিয়ার সিইও শৈলেশ কাপুর বলেছেন, ‘জানুয়ারি থেকে মার্চ অনেক সিনেমা হল খোলা ছিল। এ সময় তামিল, তেলেগু ও কন্নড় ইন্ডাস্ট্রি তাদের অনেক বড় ছবি মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু বলিউড তা করেনি। তারা পরিস্থিতি আরো ভালো হওয়ার আশায় ছিলেন। রুহি ও মুম্বাই সাগা ছাড়া আর কোনো ছবি তেমন আয় করতে পারেনি। ২০২১ সালে যত হিন্দি ছবি মুক্তি পেয়েছে, সেগুলো মিলে এতদিন আয় করেছে মাত্র ৫০ কোটি রুপি।’
শৈলেশ কাপুর বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে আরো বেশি ভয়ানক হয়ে উঠেছে। বড় হিন্দি ছবিগুলো মুক্তি পেতে আরো কয়েক সপ্তাহ, এমনকি মাসও লেগে যেতে পারে। তামিল কিংবা তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজককে মূলত তাদের রাজ্যের কভিড পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়। কিন্তু হিন্দি ছবির প্রযোজকের জন্য কাজটা অনেক কঠিন। কারণ তাকে বিবেচনায় নিতে হয় পুরো দেশের বাজারকে। দিল্লি বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে সিনেমা হল খোলা না থাকলে বলিউডের ছবির জন্য তা বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।’
প্রযোজক ও চলচ্চিত্র ব্যবসা বিশেষজ্ঞ গিরিশ জোহর মনে করেন ২০২১ সালে বলিউডে ক্ষতি হবে ৩-৪ হাজার কোটি রুপি।
এটা ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। কারণ ভারতের বক্সঅফিসের ৪৩ শতাংশই আসে হিন্দি ছবি থেকে। ২০২০ সালের প্রতিবেদন তাই বলছে। অন্যদিকে বিদেশের বাজার থেকেও এ বছর খুব একটা আয়ের আশা নেই। জোহর মনে করেন বলিউড খুব দর্শক টানতে পারবে না, কারণ এ বছর বড় ছবির সংখ্যা কম।
করণ তৌরানি বলছেন, এ বছর আন্তর্জাতিক বাজার ভিন্ন রকম এক ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। এ মুহূর্তে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে সিনেমা দেখার সুযোগ সীমিত। বিদেশে আয় কমবে কভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ।
এ বছর সালমান খানের রাধে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তি পাওয়া বলিউডের প্রথম বড় বাজেটের ছবি। রাধে মুক্তি পাবে ১৩ মে। ছবিটি হলের পাশাপাশি ওটিটি প্লাটফর্ম জি ফাইভে মুক্তি পাবে।
হলের পাশাপাশি রাধের ডিজিটাল মুক্তি নিয়ে বক্সঅফিস সংশ্লিষ্ট অনেকেই চিন্তিত। কারণ এরপর এ বছর আরো দুয়েকটা বড় ছবি সরাসরি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পেতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হল মালিকরা। ছবির ডিজিটাল মুক্তি নিয়ে এ বছর দুশ্চিন্তা থাকবে। তবে অনেকে মনে করেন তেমনটা ঘটবে না। কারণ বড় ছবির জন্য হলে মুক্তির যে আয়ের আশা থাকে, তত অর্থ ওটিটি প্লাটফর্ম দিতে রাজি হবে না। তাই সব বড় ছবির সঙ্গে ডিজিটাল প্লাটফর্মের বনিবনা সম্ভব নয়।
রাধে নিয়ে সালমান খান ফিল্মসের সঙ্গে জি ফাইভের চুক্তি হয়েছে ২০০ কোটির রুপির বেশি। তবে সব বড় ছবিই এমন অংকের অর্থ পাবে না। গিরিশ জোহর মনে করেন, ‘ওটিটির বাজেট সীমিত থাকে। গত বছর তারা অনেক বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে প্রযোজকরা ওটিটিতে যেতে চান তারা হলের মতোই আয় চান। তাই সবসময় দুই পক্ষের হিসাব মিলবে না।’
বলিউডের বড় ছবিগুলো হলে মুক্তির অপেক্ষায় থাকবে। তবে মধ্যম সারির ছবিগুলো ওটিটি প্লাটফর্মকে বেছে নেবে। শৈলেশ কাপুরের মতে, আগামী তিন থেকে চার মাসে অন্তত ১০-১৫টি হিন্দি ছবি ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পাবে।