২০ বছরে সর্বোচ্চ আউশ আবাদ রংপুর অঞ্চলে

২০২০-২১ মৌসুমের জন্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আউশ ধানের আবাদ হয়েছে রংপুর অঞ্চলে। এমনকি ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। এবার আবাদ হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ৬৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭ শতাংশ বা ৪ হাজার ১৫ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০০-০১ মৌসুমে এ অঞ্চলে আউশ আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ৭৩৪ হেক্টর জমিতে। এর পরবর্তী বছরগুলোয় ক্রমই আউশ আবাদের এলাকা কমতে থাকে এবং ২০০৯-১০ সালে সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৯৩৮ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়। ২০০৯-১০ সালের আউশ আবাদের তুলনায় এবার আবাদ হয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। আউশ আবাদের এলাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে হেক্টরপ্রতি চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ দশমিক ৯৮ টন, ২০১৮-১৯ মৌসুমে তা বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৪ টন। এবার হেক্টরপ্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩ দশমিক শূন্য ৭ টন চাল উৎপাদন হলে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৮ টন চাল চলতি আউশ মৌসুমে উৎপাদন হবে, যা মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার ৫৯ টন বেশি।

ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করে বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে আউশ আবাদকে জনপ্রিয়করণের জন্য বর্তমান সরকারের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে আউশ আবাদ ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রংপুর অঞ্চলে রবি ফসল আবাদ-পরবর্তী রোপা আমন আবাদের আগে মে থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত সময়ে পানিসাশ্রয়ী বৃষ্টিনির্ভর আউশ আবাদ করা যায়। কয়েক বছরে সরকারি প্রণোদনায় বিনা মূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা, উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের আউশ ধানের বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবিড় মনিটরিংয়ের ফলে সেচ সাশ্রয়ী আউশের আবাদে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। যথাসময়ে কৃষি উপকরণ বিতরণ করায় আবাদের ওপর তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এবং এতে কাঙ্ক্ষিত ফলন ও উৎপাদন পাওয়া গেছে।

চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৫০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য পাঁচ কেজি উফশী জাতের আউশ বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। ২৪ হাজার ৮০ জন কৃষককে ৫ কেজি করে বীজসহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্রি ও বিনা থেকে ১ হাজার ৯০০ কেজি বীজ সংগ্রহ করে বিনা মূল্যে ৩৮০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, এ অঞ্চলে জমির প্রায় অর্ধেক ‘বোরো-পতিত-রোপা আমন’ শস্যবিন্যাসের আওতায় রয়েছে। এ শস্য বিন্যাসের মধ্যে আউশ উপযোগী জমিকে আউশভিত্তিক তিন ফসলি জমিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চলছে মাঠ পর্যায়ে। ফলে আউশের আবাদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে শস্যের নিবিড়তা বাড়বে।

তিনি আরো জানান, উপজেলা এবং ব্লক পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে আউশ আবাদে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে জমি তৈরিতে জৈব সার ও সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ, মানসম্পন্ন আধুনিক জাতের বীজ ব্যবহার করে আদর্শ বীজতলায় চারা উৎপাদন, সঠিক বয়সের চারা সারিতে ও সঠিক দূরত্বে রোপণ, চারা রোপণে লোগোবো পদ্ধতির অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সম্পূরক সেচ প্রদানসহ অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা যেন যথাযথভাবে নেয়া হয় তার জন্য কৃষকের সঙ্গে সংযোগ অব্যাহত রয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *