২০২২ সালের আগে বাজার পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় শিগগিরই চাঙ্গা ভাব ফেরার সম্ভাবনা নেই। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের যে চাহিদা ছিল, ২০২২ সালের আগে তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। খবর রয়টার্স।

আইইএর এক নোটে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উদ্বৃত্ত সরবরাহ প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুতগতিতে কমছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বছরের শুরুর দিকে পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার ব্যাপকহারে কমে গিয়েছিল। তবে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ ও মিত্র দেশগুলোর (ওপেক প্লাস) রেকর্ড উত্তোলন হ্রাস ও সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দেশে চাহিদা ফের বাড়ায় বাজারে পণ্যটির চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য ফিরতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দৈনিক গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস চুক্তির মেয়াদ আরো এক মাস বাড়াতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ওপেক ও নন-ওপেকের দেশগুলো। এর জের ধরে চলতি বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দৈনিক গড়ে ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল কমেছে।

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি অনেকটা সামলে উঠেছে চীন। ফলে মহামারীর মধ্যে দেশটির স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফিরছে। এতে দেশটিতে জ্বালানি তেলের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। গত এপ্রিলে চীনে পণ্যটির চাহিদা বেড়ে স্বাভাবিক স্তরে ফিরেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ জ্বালানি তেল আমদানি করেছে দেশটি। চীনের মতো এশিয়া ও ইউরোপের আরো কয়েকটা দেশ লকডাউন থেকে সরে এসেছে। এতে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।

তবে এতে বাদ সাধতে পারে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাদুর্ভাব। সম্প্রতি চীন ঘোষণা দিয়েছে, মহামারীর নতুন সম্ভাব্য আঘাতের কারণে শিগগিরই রাজধানী বেইজিংয়ের স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেশটির অর্থনীতি এতে নতুন করে সংকটে পড়তে পারে। বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল ভোক্তা দেশ হওয়ায় পণ্যটি বাজার নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া অন্যান্য দেশেও ভাইরাসটির দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।

আইইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক গড়ে ৮১ লাখ ব্যারেল কমে যেতে পারে, বার্ষিক হারে যা সর্বোচ্চ পতনের রেকর্ড। তবে ২০২১ সালে গিয়ে চলতি বছরের তুলনায় পণ্যটির চাহিদা দৈনিক গড়ে ৫৭ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে। তবে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগের তুলনায় তা অনেক কম। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক গড়ে ৯ কোটি ৭৪ লাখ ব্যারেল। ২০১৯ সালের তুলনায় যা দৈনিক গড়ে ২৪ লাখ ব্যারেল কম।

যদিও এ পূর্বাভাস নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তার বিষয়ে সতর্ক করেছে আইইএ। পুরো পরিস্থিতি নির্ভর করছে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতির ওপর। তবে আপাতদৃষ্টিতে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে বলা যায়, জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদাকে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগের অবস্থানে পৌঁছতে হলে কমপক্ষে ২০২২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

আইইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যানবাহন খাত স্থিতিশীলতা অনেকটা কাটিয়ে উঠছে, তবে তা কেবল লকডাউন ও সরকারি বিধিনিষেধ সরিয়ে দেয়ার জন্য নয়। মানুষ মূলত গণপরিবহন এড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। এদিকে বিমান চলাচলের ওপর নির্ভর করছে এ খাতে জ্বালানি চাহিদা বাড়বে কিনা। খাতটি বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর যাত্রী যাতায়াতের হার ৫৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।

অন্যদিকে জ্বালানিটির বৈশ্বিক সরবরাহেও রদবদল ঘটতে পারে। আইইএর মতে, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন দৈনিক গড়ে ৭২ লাখ ব্যারেল কমে যেতে পারে। তবে পরের বছর এর তুলনায় পণ্যটির উত্তোলন দৈনিক গড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে। এতে জ্বালানিটির দাম মোটামুটি ব্যারেলপ্রতি ৪০ ডলারে স্থির হতে পারে, যা পণ্যটির বাজার পুনরুদ্ধারের জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *