হুয়াওয়ে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত?

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে। মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোন বাজারে ক্রমে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে চীনভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলেও স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং ও অ্যাপলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বজুড়ে হুয়াওয়ের কতসংখ্যক স্মার্টফোন ব্যবহার হচ্ছে?

সম্প্রতি মোবাইল সার্ভিস ইকোসিস্টেম ও অ্যাপগ্যালারির সর্বশেষ আপডেট তথ্য দিয়েছে হুয়াওয়ে। ১৯তম চীন ইন্টারনেট সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী তাদের মোবাইল সার্ভিস ইকোসিস্টেমের ব্যবহার খুব দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৭০ কোটির বেশি হুয়াওয়ে ডিভাইস ব্যবহারকারী রয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি।

শুধু তা-ই নয়; সম্মেলনে জানানো হয় হুয়াওয়ের নিবন্ধিত ডেভেলপারের সংখ্যা এখন ১৬ লাখে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি ৮১ হাজারের বেশি ইনোভেটিভ অ্যাপ্লিকেশন সংযুক্ত করা হয়েছে হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিস কোরে বা এইচএমএসে।

বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে উন্নততর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি আনতে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস ক্রমেই ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত এ বিশ্বে কাউকেই সেবার বাইরে রাখা যাবে না। তাই গ্রাহকদের আরো ভালো সেবা দিতে ডেভেলপারদের অনবরত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই অংশ হিসেবে শাইনিং প্রোগ্রামের অধীনে ডেভেলপারদের ১০০ কোটি ডলার প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এ প্রোগ্রামের অধীনে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি উদ্ভাবনী অ্যাপস নিয়ে কাজ হয়েছে।

বিশ্বের পাঁচ হাজারের বেশি ডেভেলপারের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ডেভেলপার কনফারেন্স ২০১৯-এ হুয়াওয়ে কনজিউমার বিজনেস গ্রুপের (সিবিজি) ক্লাউড সার্ভিস বিভাগের সভাপতি ঝাং পিংয়ান বলেন, ১৭০টির বেশি দেশ এবং অঞ্চলে হুয়াওয়ের অফিশিয়াল অ্যাপ ডিস্ট্রিবিউশন প্লাটফর্ম অ্যাপগ্যালারির কার্যক্রম রয়েছে। অ্যাপগ্যালারির মাধ্যমে আমরা স্থানীয় ডিজিটাল উদ্ভাবন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের সহযোগীদের তৈরি প্রতিটি অ্যাপ ৭০ কোটি ডিভাইস ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যাক। এইচএমএস অ্যাপ যেমন হুয়াওয়ে ভিডিও, হুয়াওয়ে মিউজিক এবং রিডার বর্তমানে আরো উন্নত সেবা দিয়ে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, হুয়াওয়ে কুইক অ্যাপের মতো এমন আরো কিছু উদ্ভাবনী সেবা নিয়ে আসছে, যা মানুষের ডিজিটাল লাইফ আরো সমৃদ্ধ ও সহজ করে তুলছে। ইনস্টলেশন-ফ্রি কুইক অ্যাপ কম মেমোরি ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের ট্যাপ-টু-ইউজ এক্সপেরিয়েন্স দিচ্ছে। কুইক অ্যাপের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা পরিচালিত অ্যাবিলিটি বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কনটেন্ট অ্যাবিলিটি, কার্ড অ্যাবিলিটি ও অ্যাপ অ্যাবিলিটির মতো উচ্চমানসম্পন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এইচএমএস কোরের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অংশীদার ও ডেভেলপারদের উদ্ভাবনে সাহায্য করার জন্য ‘চিপসেট-ডিভাইস-ক্লাউড’ সেবা উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডেভেলপাররা হুয়াওয়ের মেশিন লার্নিং কিট, হাইএআই, এআর ইঞ্জিন ইত্যাদির মতো সেবা পাচ্ছেন। এইচএমএস কোর ৫.০ এখন বিশ্বব্যাপী পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ‘ইউজার-এক্সপেরিয়েন্স’ বৃদ্ধির জন্য হুয়াওয়ের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারেও এটি উন্মুক্ত করা হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দক্ষতার সঙ্গে কাজ পরিচালনার জন্য অ্যাপগ্যালারির মাধ্যমে হুয়াওয়ে বিশ্বের ৬৭টি অঞ্চলে ওয়ান স্টপ ও পুরোদমে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের ছয়টি অঞ্চলে হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস সেন্টার খোলা হয়েছে। ডিজি এক্স ল্যাব, হুয়াওয়ে ডেভেলপারস, ডেভেলপার ডে ও আরো বহু সুযোগের মাধ্যমে স্থানীয় সেবাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া হুয়াওয়ে সবসময় বিশ্বব্যাপী ডেভেলপারদের প্রযুক্তি ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহ প্রদান করে থাকে।

হুয়াওয়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি বর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইভজি নেটওয়ার্ক চুক্তি হুয়াওয়ের হাতছাড়া হওয়ার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসার ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে। কয়েক প্রান্তিক আগেও এর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ছিল নজরকাড়া। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ এবং মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে নানা অযৌক্তিক অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা প্রবৃদ্ধি রুখতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ডিভাইস ব্যবসা ভালো করলেও হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসা বিভাগকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামবিষয়ক চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এসব চুক্তি হুয়াওয়ের সঙ্গে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তুলনামূলক ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্ব্বী নকিয়া ও এরিকসন বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।

হুয়াওয়ের দাবি, বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশে ও স্থানে হুয়াওয়ে সৃষ্টিশীল আইটি পণ্য, সেবা ও সলিউশনস ব্যবহার হয়, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে সেবা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, রাশিয়া, ভারত ও চীনে হুয়াওয়ের মোট ১৪টি গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) সেন্টার রয়েছে। হুয়াওয়ের তিনটি বিজনেস ইউনিটের মধ্যে হুয়াওয়ে কনজিউমার বিজি, যা কাজ করে স্মার্টফোন, পিসি, ট্যাবলেট, পরিধানযোগ্য ডিভাইস ও ক্লাউড সেবা নিয়ে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *