দেশের কওমী মাদরাসা শিক্ষার উম্মুল মাদারিস খ্যাত দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা আজ (১ জানুয়ারী) অনুষ্ঠিত বার্ষিক ‘সালানা মাহফিল ও দস্তারবন্দি সম্মেলনে’ গত তিন মাস আগে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র আন্দোলন ও তার কারণ ব্যাখ্যা করে একটি প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে।
ছাত্র সমাজের নাম দিয়ে প্রচারিত এ প্রচারপত্রে হাটহাজারী মাদরাসার সদ্য প্রয়াত ও ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করা মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহ. এর ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী ও মাদরাসায় সংগঠিত হওয়া ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
প্রচারপত্রের বিবরণে আন্দোলনের কারণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিষদ বর্নণা করা হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২০ইং তারিখে মাদরাসায় সংগঠিত ছাত্র আন্দোলনের কারণ ও পূর্ণাঙ্গ ঘটনাপ্রবাহ উল্যেখ করা হয়েছে।
নাটক নির্মাণে চূড়ান্ত নষ্টামির প্রতিযোগিতায় মেতেছে চ্যানেলগুলো ≣ [১] এপ্রিল ও জুন মাসে সফ্টব্যাংকের লাভ ১১.৯ ভাগ বৃদ্ধি ≣ [১] দুর্যোগকালীন ও সেশনজটমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় অনলাইন পাঠদানে গুরুত্বারোপ
এছাড়াও হাটহাজারীতে সংগঠিত সে ছাত্র আন্দোলনে আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর প্রতি নির্যাতন করা ও তার চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার যে দাবি তার পরিবার ও হেফাজতের পদবঞ্চিত কিছু নেতারা করেছেন সে দাবি অস্বীকার করে সে সময়ের বিভিন্ন বিষয় উল্যেখ করা হয়েছে।
প্রচারপত্রটি সম্পর্কে আল্লামা শফী রহ. এর পরিবার ও শফী রহ. এর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক দাবি করে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া কয়েকজনের বক্তব্য নিতে চাইলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও কাদের পক্ষ হয়ে কারা এ প্রচারপত্র বিতরণ করেছে সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
বিশেষ একটি সূত্র থেকে পাবলিক ভয়েসের কাছে ‘হাটহাজারীতে আনাস বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভের সূত্রপাত ও অজানা কিছু তথ্য’ শিরোনামে প্রচারিত প্রচারপত্রের কপিটি এসেছে।
পাঠকের জন্য নিচে প্রচারপত্রটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।
বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম :
আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে এর সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে। যুগশ্রেষ্ঠ চার বুজুর্গ আল্লামা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ., আল্লামা আব্দুল ওয়াহেদ হাওলভী রহ., আল্লামা সূফী আজিজুর রহমান রহ. ও আল্লামা আব্দুল হামীদ রহ. এই মাদ্রাসার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা দেশ ও বহির্বিশ্বে দ্বীনের বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে।
শুরু থেকেই যাঁরা হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামীমের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন মুখলিস, নিষ্ঠাবান, সৎ, যোগ্য ও আমানতদার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অত্যন্ত সুচারুরূপে পরিচালিত হয়ে আসছিল মুসলিম উম্মাহর আমানত এই উম্মুল মাদারিস জামিয়া হাটহাজারী। প্রতিষ্ঠালগ্নের প্রথম মুহতামীম ছিলেন আল্লামা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ.।
কালের পরিক্রমায় মুহতামিমের এই গুরুদায়িত্ব সোপর্দ হয়েছিলো একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম আধ্যাত্মিক রাহবার শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর উপর। খলিফায়ে মাদানী আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে প্রায় তিন যুগ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামীমের গুরুদায়িত্ব অত্যন্ত সুনামের সহিত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।
কি কারণে মাওলানা আনাসের উপর ছাত্ররা চরম ক্ষুব্ধ ছিলো! :
আল্লামা আহমদ শফী রহ. সুনামের সাথে প্রায় ৩৬ বছর হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামীমের দায়িত্ব পালন করে সর্বমহলে সুখ্যাতি অর্জন করলেও বার্ধক্যে উপনিত হওয়ার পর তাঁর মহান ব্যক্তিত্বকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো হযরতের ছোট ছেলে মাওলানা আনাস। পুরো মাদ্রাসায় কায়েম করেছিলো ত্রাসের রাজত্ব। তার জুলুমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমনকি তার ধারাবাহিক অন্যায়-অপকর্মের কারণে হাটহাজারীর আপামর জনসাধারণও ছিলো তার প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। কিছু চিহ্নিত কুচক্রী ব্যক্তি মাওলানা আনাসকে অন্যায় অপরাধে সহযোগিতা করে সাহস যুগিয়েছিলো। কুচক্রীদের সহযোগিতা পেয়ে এবং তার পিতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.কে পুঁজি করে একের পর এক অন্যায় অপকর্ম করেই যাচ্ছিল।
মাওলানা আনাস বিনাদোষে নিরিহ ছাত্রদের বোর্ডিংয়ের খাবার বন্ধ করে দেওয়া, আবাসিক হলের সীট বাতিল করে দেওয়া, ভর্তি ফরম আটকে দেওয়া, পুরো বছর পড়ার পর পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এসে প্রবেশপত্র আটকে দিয়ে পরীক্ষার সুযোগ না দেওয়া, মাদ্রাসা থেকে বিনা অপরাধে নাম কেটে দেওয়া সহ নানাভাবে হয়রানি করে ছাত্রদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো।
এছাড়াও আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর দোহাই দিয়ে যত্রতত্র “আব্বায় কইছে, বা-জি কইছে” বলে অন্যায়ভাবে মাদ্রাসার যোগ্য ও নিরীহ উস্তাদদেরকে বিদায় করে দিয়ে অন্য উস্তাদদেরকে কোণঠাসা করে রাখা, জোরপূর্বক বিভিন্ন দায়িত্ব ছিনিয়ে নেওয়া, পিতার পাওয়ার দেখিয়ে মাদ্রাসার উস্তাদদের উপর নিজের অবৈধ কর্তৃত্ব খাটানো, মাদ্রাসার টাকা-পয়সা নিজের মনমত করে খরচ করা সহ নানা অপরাধের কারণে দীর্ঘদিন যাবত মাওলানা আনাসের উপর ছাত্রদের একটা চাপা ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিলো।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.কে ব্যবহার করে শুধু হাটহাজারী মাদ্রাসা নয়; বরং কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক, হাইয়াতুল উলইয়া, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ পুরো কওমী অঙ্গনকে কলুষিত করেছিলেন মাওলানা আনাস ও তার সহযোগীরা। তাদের জুলুম-নির্যাতন ও অপকর্মের যাঁতাকলে অতিষ্ঠ ছিলো পুরো কওমী জগত।
হঠাৎ কেন আনাস বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছিলো? :
মাওলানা আনাস শিক্ষক হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ পিতার ক্ষমতাকে পুঁজি করে ছাত্র-শিক্ষকের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর জীবনের একেবারে শেষ সময়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদেরকে জিম্মি করে ফেলেছিলো মাওলানা আনাস। অবশেষে ছাত্রদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় ছাত্রদের মাঝে দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। কোন ধরনের জ্বালাও-পোড়াও এবং রক্তপাত ছাড়া একেবারে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সংঘটিত হয়েছিলো একটি সফল ছাত্র বিক্ষোভ।
হাটহাজারী মাদ্রাসার ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারে এবং মাদ্রাসায় পড়ালেখার একটি শান্তিময় নিরিবিলি পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কতিপয় ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলো ছাত্ররা। এই বিক্ষোভ আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর বিরুদ্ধে নয়; বরং ছাত্রদের পুরো বিক্ষোভ ছিলো মাওলানা আনাসের জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা যেভাবে হয়েছিলো :
মাওলানা আনাসের অন্যায়-অবিচার, জুলুম- নির্যাতন চলতে থাকায় দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভের আগুন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছিল। জুলুম সহ্য করতে করতে পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২০ইং ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা হয়। সেদিন জোহরের নামাজ শেষে ছাত্ররা মাদ্রাসার মাঠে অবস্থান নিয়ে মাওলানা আনাস গং থেকে উম্মুল মাদারীস দারুল উলুম হাটহাজারী রক্ষার জন্য নানা শ্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক। মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আর তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য ছাত্ররা মাদ্রাসার শাহী গেইটসহ অন্যান্য ফটকেও শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়।
মাঠে অবস্থানরত ছাত্রদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে এক বিস্ময়কর ক্ষোভ। এই ক্ষোভ, এই যাতনা, এক-দুদিনের নয়, তা সহজেই অনুমান করতে পেরেছিল সর্বস্তরের জনগণও। এই বিক্ষোভে পুরো মাদ্রাসার ছাত্ররা যোগ দেয়। বাদ পড়েনি এবতেদায়ী বা প্রাথমিক শ্রেণীর ছাত্ররাও। ছাত্রদের পক্ষ থেকে লিখিত পাঁচটি দাবি প্রচার করা হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সবাই উক্ত দাবীর সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
দাবীগুলো ছিলো-
(১) মাওলানা আনাস মাদানী সাহেবকে অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
(২) ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধা বাস্তবায়ন সহকারে সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
(৩) আল্লামা আহমদ শফী সাহেবকে মাজুর বা অক্ষম হওয়ায় পরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনক অব্যাহতি দিয়ে ছেরপুরস্ত বা উপদেষ্টা বানাতে হবে।
(৪) উস্তাদদের পূর্ণ অধিকার ও বিয়োগ-নিয়োগকে শূরার নিকট পূর্ণ ন্যাস্ত করতে হবে।
(৫) বিগত শূরার হক্কানী আলেমদেরকে পূর্ণবহাল ও বিতর্কিত সদস্যদেরকে পদচ্যুত করতে হবে।
ছাত্র বিক্ষোভের সংবাদ পেয়ে প্রশাসন মাদ্রাসার প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় লোকজনও আসতে শুরু করেন এবং ছাত্র বিক্ষোভের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। এমনকি, দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশী মুসলমানরাও এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। প্রশাসন যেন ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী আদায়ের ছাত্র বিক্ষোভে কোনধরনের নগ্ন হস্তক্ষেপ না করে, সেজন্য মসজিদের মাইকে বার বার ঘোষণা করা হয় যে, “আজকের ছাত্র বিক্ষোভ একান্তই মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়। ছাত্রদের কিছু দাবি রয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের নিকট। সেই দাবিগুলো আদায়ের জন্য ছাত্ররা মাদ্রাসার মাঠে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। প্রশাসন ও এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা কারো কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। মাদ্রাসার ভিতরে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। ছাত্ররা সুশৃংখলভাবে অবস্থান করছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে।” সাথে সাথে লিখিত দাবীগুলো বাহিরে পাঠানো হয়। স্থানীয় লোকজন এবং প্রশাসন দাবিগুলো পড়ে বিনাবাক্যে মেনে নেয় এবং লিখিত দাবীগুলো হাতে পেয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভের যৌক্তিকতা বুঝে প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করেন।
ধীরে ধীরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব দরবারে। তখন সবার দৃষ্টি হাটহাজারী মাদ্রাসার দিকে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দোয়া করা হয় দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায়। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তাদের দাবিগুলো নিয়ে মুঈনে মুহতামিম মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব এর মাধ্যমে মুহতামিম সাহেব আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর নিকট উপস্থিত হয়। যেহেতু শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রহ. বার্ধক্যজনিত কারণে তখন অসুস্থ। শাইখুল ইসলাম রহ.এর নিকট দাবীগুলো উত্থাপন করা হয় এবং মাওলানা আনাসের ব্যাপারে লিখিত আকারে অভিযোগগুলো জানানো হয়। তিনি অবাক হয়ে বলেন- আমি তো এগুলোর কিছুই জানিনা! তিনি রাগতঃস্বরে বলেন, আমার ছেলে আনাস এতসব অপরাধ করেছে, তোমরা আগে কেন বলনি? আমি তো বাহিরের তেমন কোন খবর জানিনা।
হুজুর ছাত্রদেরকে শান্ত হতে বললে ছাত্ররা নিজেদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করার অনুরোধ করে। ছাত্ররা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। কোনভাবেই ক্লাসে ফিরে যেতে আগ্রহী নয়। বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব, তিনি বিষয়টি মুহতামিম সাহেবকে বুঝানোর চেষ্টা করেন এবং সক্ষমও হন। তখন মুহতামিম সাহেব শেখ আহমদ সাহেবকে বলেন, ছাত্রদেরকে আমার পক্ষ থেকে শান্ত থাকার আহবান করুন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরার বৈঠক ডাকুন। শাইখুল ইসলাম রহ.এর নির্দেশে মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব শুরা সদস্যদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।
ছাত্ররা এই সংবাদ পেয়ে জিকির ও দোয়ায় মগ্ন হয়ে পড়ে। প্রতিটা ছাত্রের মুখে এই দোয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল যে, হে আল্লাহ! মাদ্রাসার জন্য যে সিদ্ধান্ত মঙ্গল হবে, এমন সিদ্ধান্তই নসীব করুন। সময়ের স্বল্পতার কারণে দূরবর্তী শুরা সদস্যগণ উপস্থিত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর নির্দেশ আর মুঈনে মুহতামিম মাওলানা শেখ আহমদ সাহেবের ডাকে সাড়া দিয়ে নিকটবর্তী শুরা সদস্যগণ মাদ্রাসায় এসে হাজির হন। দূরবর্তী শুরাসদস্যগণ জানান যে, উপস্থিত শুরা সদস্যগণ যেই সিদ্ধান্ত নিবেন, আমরাও সেই সিদ্ধান্তের সাথে একমত থাকবো, ইনশাআল্লাহ।
শূরার বৈঠক ও সিদ্ধান্ত :
মাগরিবের পর থেকে শুরা সদস্যগণ আসতে থাকেন। নিকটবর্তী শুরাসদস্যদের মধ্যে মাওলানা নোমান ফয়জী, মাওলানা ওমর ফারুক এবং মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী এসে উপস্থিত হন। ছাত্ররা তখনও দোয়ায় মগ্ন। আর এদিকে মসজিদের মাইকেও ঘোষনা হচ্ছিল দফায় দফায়। যাতে করে প্রশাসনকে কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
শূরার সদস্যদের সাথে মাদ্রাসার অন্যান্য ওস্তাদগণও উপস্থিত ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.এর কার্যালয়ে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে পেশকৃত দাবী-দাওয়া নিয়ে মাদ্রাসার ওস্তাদ এবং উপস্থিত শুরা সদস্যদের মাঝে আলোচনা হয় দীর্ঘ সময়। আলোচনায় শুরা সদস্যগণ সার্বিক অবস্থা বুঝতে সক্ষম হন। সবকিছু উপলব্ধি করে শূরা সদস্যগণ আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.এর সাথে জরুরী পরামর্শে বসেন। মাওলানা আনাসের অন্যায় অপরাধের বিশাল ফিরিস্তি ও ছাত্রদের ন্যায্য দাবীসমূহ যখন আল্লামা আহমদ শফী রহ.এর সামনে তুলে ধরা হয়। তখন তিনি বললেন, শুধু এই দাবীগুলোই নয়, দ্বীন ও মাদ্রাসার কল্যাণের জন্য যদি এরচেয়েও কঠিন কোন দাবী মানতে হয়, আমি মানতে রাজি আছি। শূরার সদস্য ও মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকদের সামনে ছাত্রদের দুটি দাবী মেনে নিয়ে বাকি দাবীগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ১৯/০৯/২০২০ইং রোজ শনিবারে পুণরায় শূরার বৈঠকের আহ্বান করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.।
মেনে নেওয়া দু’টি দাবী ছিলো-
(১) মাওলানা আনাসকে হাটহাজারী মাদ্রাসার সকল দায়িত্ব থেকে স্থায়ী বহিষ্কার।
(২) বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কোন ছাত্রকে হয়রানি না করা।
শায়খুল ইসলাম রহ. এর নির্দেশে শূরা সদস্য মাওলানা নোমান ফয়জী সাহেব মেনে নেওয়া দু’টি দাবী ছাত্রদের মাঝে ঘোষণা করে শোনান। ছাত্ররাও শূরার সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ রুমে চলে যায়।
দাবী মানার পরও ১৭ সেপ্টেম্বর পুনরায় কেন ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছিলো? :
১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। ছাত্ররা নিয়মানুযায়ী পড়ালেখায় মনোনিবেশন করে। এই সুযোগে মাওলানা আনাস ও তার সহযোগীরা মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.কে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধের পাঁয়তারা করে। মুহুর্তের মধ্যেই সেই সংবাদ ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। আল্লামা আহমদ শফী রহ.কে ব্যবহার করে বরাবরই আনাস চক্রটি সফল হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হলো তাদের চক্রান্ত। বহিষ্কৃত মাওলানা আনাস তার অস্তিত্বকে ঠিকিয়ে রাখতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ করা ও শুরার সিদ্ধান্তকে বানচাল করার গভীর ষড়যন্ত্র করে। এই খবরটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্ররা পুনরায় মাঠে নেমে আসে। আবারো পূর্বের মতো অবস্থান। সাথে সাথে দালালগোষ্ঠীর চক্রান্ত থেকে রক্ষার জন্য আল্লামা আহমদ শফী রহ.কে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয় ছাত্ররা। যাতে করে আনাস গংরা নতুন চক্রান্তের বীজ বপন করতে না পারে।
আনাস গংদের বিষয়টি ছাত্ররা সহকারি পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ সাহেবের সাথে আলোচনা করে। তিনিও বিষয়টি বুঝতে পারেন। হতে পারে দালালচক্র এমন কোন চক্রান্ত করবে, যার দরুন মাদ্রাসা ও ছাত্র-শিক্ষকদের বিশাল ক্ষতি হবে। তাৎক্ষণিকভাবে আবারও মুহতামিম সাহেবের অনুমতিক্রমে সহকারি পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব শূরা সদস্যদের ফোন করে আসতে বলেন। মাগরিবের পর থেকে আসা শুরু করেন শূরা সদস্যগণ। অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত হন সেদিন। আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সাহেবও উপস্থিত ছিলেন।
শূরাদের উপস্থিতিতে আল্লামা আহমদ শফী রহ.এর সভাপতিত্বে শুরু হয় সেদিনের বৈঠক। মাদ্রাসার সার্বিক কল্যাণ বিবেচনাকরে আল্লামা আহমদ শফী রহ. এহতেমামীর দায়িত্ব শূরার উপর অর্পন করেন এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে পেশকৃত বাকি তিনটি দাবিও মেনে নেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.।
শূরা সদস্যগণের সর্বসম্মতিক্রমে আল্লামা শফী রহ.কে ছদরে মুহতামিমের দায়িত্ব অর্পন করলে তিনি তা স্বাদরে গ্রহণ করেন। তারপর মসজিদের মাইকে আল্লামা সালাউদ্দীন নানুপুরী ও মাদরাসার মাঠে আল্লামা নোমান ফয়জী সাহেব শূরা সদস্যগণের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্তগুলো ঘোষণা করেন। ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শূরার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। মুহুর্তের মধ্যে মাদ্রাসার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।
শূরা বৈঠক শেষে আল্লামা শফী সাহেব কিছুটা অসুস্থতাবোধ করেন। হযরতের ব্যক্তিগত সহকারী মাওলানা শফিউল আলম জানান, হযরতকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। এ কথা শোনার সাথে সাথে মাদ্রাসার ছাত্র, শূরা সদস্য ও উস্তাদগণ মিলে হুজুরের নাতি আরশাদের জিম্মায় হযরতকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে চলে হযরতের চিকিৎসা, আর মাদ্রাসায় চলে হযরতের সুস্থতার জন্য দুআ-কান্নাকাটি। দুআ মোনাজাতের মাধ্যমেই গত হয় বৃহস্পতিবার রাত। হযরতের জন্য সকলের মনে কষ্ট। আর কষ্ট হবেই না কেন! তিনি যে ছাত্রদের প্রিয় উস্তাদ, দরদী রাহবার। হযরতের অসুস্থতায় উনার রূহানী ছাত্ররা তো ভালো থাকতে পারে না। এরই মধ্যে শুক্রবার বেলা ১১.০০ টার দিকে মোবাইলে একটি সুসংবাদ দেন হজরতে ছেলে মাওলানা আনাস। হাটহাজারী মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মাওলানা ইয়াহিয়া সাহেবকে ফোন করে আনাস জানায়, আব্বা আগের চেয়ে একটু সুস্থ, আলহামদুলিল্লাহ। হুজুরের শারীরিক উন্নতির কথা শুনে ছাত্র-উস্তাদরা খুবই খুশী হন এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় প্রিয় শায়েখকে ফিরে পেতে আল্লাহর দরবারে দুআ-কান্নাকাটি অব্যাহত থাকে।
হঠাৎ হৃদয়বিদারক সংবাদ :
শুক্রবার সকাল থেকেই মাদ্রাসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ছাত্রদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, এটা ছাত্রদের জন্য খুশির খবর হলেও হযরতের অসুস্থতায় জামিয়ার সকল ছাত্রদের আঘাত লাগে হৃদয়ে। সকলেই হযরতের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে থাকে। দোয়া করা হয় জুমআর নামাজ শেষেও। চট্টগ্রাম মেডিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করে অভিজ্ঞ ডাক্তারগণের তত্বাবধানে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয় হুজুরকে। সরকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসার কোন ত্রুটি না থাকা সত্বেও হঠাৎ করে আনাস গংরা সন্ধায় হুজুরকে নিজেদের জিম্মায় এয়ার এম্বোলেন্সযোগে ঢাকার আসগর আলী হাসপাতাল নামক বেসরকারী প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার পর পরই খবর আসে- শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী রহ., যিনি ছিলেন সকলের মাথার তাজ, নয়নের মনি; তিনি সকলকে ছেড়ে প্রিয় মাহবুবে আ’লার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গিয়েছেন আমাদের ছেড়ে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া-ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
তিনি শুধু জামিয়ার ছাত্রদের নয়, কাঁদিয়ে গেলেন পুরো বিশ্ববাসীকে। এতিম হয়ে গেল পুরো মুসলিম উম্মাহ যোগ্য একজন রাহবার হারিয়ে। বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার চিরন্তন সত্য বাণী
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ
[“প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে”।]
আল্লাহ তা’য়ালার বিধান মেনে নিতেই হবে। আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ করেন :
ۚ إِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
[যখন তাদের সে ওয়াদা (মৃত্যু) এসে পৌঁছে যাবে, তখন না একদন্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে। (সূরা ইউনুস: ৪৯)]
মূহুর্তেই মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছে যায় সারাবিশ্বে। শোক জানায় দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ইসলামি স্কলারগণ আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। জাতীয় সংসদে হযরতের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব পাস করা হয়। কিন্তু কেউ শতবর্ষী এই মহামনীষীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলেননি।
এদিকে মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই শুক্রবার রাতেই হযরতকে একনজর দেখতে সারাদেশ থেকে হাটহাজারীর অভিমুখে আসতে থাকেন হযরতের খলিফা, শাগরেদ, ছাত্র ও ভক্তবৃন্দ। পরদিন শনিবার বাদ যোহর কয়েক লক্ষ লক্ষ মুসল্লীর উপস্থিতিতে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার ইমামতি করেন হজরতের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ। মাদ্রাসার মাঠ, মাদ্রাসার ভবন, সাত তলা মসজিদ ও আশেপাশের ২ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে মুসুলিরা জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর জানাযায় সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ তাঁর আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার প্রমাণ বহন করে।
হযরতের জীবনের শেষ কারামত :
কালজয়ী এই মহান পুরুষ আল্লাহর দরবারে আগে থেকে মকবুল থাকলেও বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন ২০১৩ সালের ৫মে শাপলা চত্বরের ঐতিহাসিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে। শাপলার মর্মান্তিক ট্রাজেডির পর যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর সরলতার সুযোগ নিয়ে কিছু নামধারী দালাল নিজেদের স্বার্থ লুটতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে হযরতের আশেপাশে বিশ্বস্ত কাউকে ভীড়তে দেয়নি এ দালাল চক্রটি। বাতিলের জন্য আতংক হলেও হযরতের চারপাশের লোকগুলো সাধুবেশী হওয়ায় চিনতে পারেননি শায়খুল ইসলাম রহ. নিজেও। শত বছরের চেষ্টা, সাধনা আর আরাধনা করে তিনি যেমন কুড়িয়েছেন মহান প্রভুর ভালোবাসা, তেমনি অর্জন করেছেন মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস। হযরতের সারা জীবনের সাধনার ফসল জলাঞ্জলি দিতে দ্বিধাবোধ করেনি এই দালালচক্র।
হযরতের ইন্তেকালের কিছুদিন আগে একজন বিশিষ্ট আলেম এক মজলিসে বলেছিলেন, “আমাদের একজন লোক স্বপ্ন দেখেছেন, আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহ. মাওলানা আনাসের জানাযা পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন- ঐ লোক স্বপ্নটা আমার সাথে আলোচনা করলে আমি বললাম, স্বপ্নের ব্যাখ্যা হয়তো এটাই হতে পারে যে, আল্লামা আহমদ শফী রহ. জীবদ্দশায় নিজের ছেলেকে নিজহাতে বহিষ্কার করবেন। আর নিজের নামে যে কলঙ্কের কালিমা লেপন করা হয়েছে, তার পরিসমাপ্তি করবেন এর মাধ্যমে। এছাড়া ভিন্ন কিছু দেখছি না।” আলহামদুলিল্লাহ! হয়েছেও তাই…
স্বার্থান্বেষী দালাল চক্রের মূলহোতা নিজ সন্তান মাওলানা আনাসকে নিজের হাতে বহিষ্কার করে নিজের যশ-খ্যাতি অক্ষুণ্ন রেখেছেন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি রহ.। তাঁর যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে রক্ষা পেয়েছে কওমী অঙ্গনের শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। মহান প্রভু চাননি তাঁর প্রিয় বান্দা অপবাদ নিয়ে তাঁর সাক্ষাতে মিলিত হোক। আল্লাহ তায়ালা হযরতকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন…
প্রিয় পাঠকমহল! এই আন্দোলনটি হাটহাজারী মাদরাসার বিরুদ্ধে ছিলো না। আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি রহ.এর বিরুদ্ধেও ছিলো না। এই আন্দোলন ছিলো মাওলানা আনাস গংদের দীর্ঘদিনের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই চক্রটি কওমী অঙ্গন থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে আল্লামা শফি রহ. এর স্বাভাবিক মৃত্যুকে অস্বাভাবিক দাবী করে বিভিন্নভাবে নিজেদের অপরাধ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে কওমী অঙ্গনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাদের এসব উস্কানীমূলক বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হয়ে কওমী অঙ্গনকে পূর্বের চেয়ে আরও বেশী ভালোবাসার চাদরে আগলে রাখার অনুরোধ রইল। সমস্ত বাতিল শক্তির মোকাবেলায় আপনাদেরকে আমরা পাশে চাই। এই মাদ্রাসা আপনাদের, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য দেওয়া মহামূল্যবান একটি আমানত। এই আমানত রক্ষা করাও আপনাদের দায়িত্ব। তাই কওমী অঙ্গনের সুখে-দুঃখে পূর্বের মত ভবিষ্যতেও আপনারা সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এই কওমী অঙ্গনের বিশাল খেদমতের বিনিময়ে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন। আল্লাহুম্মা আমীন…
প্রচারে : ছাত্র সমাজ।