টোকিওর রোলার কোস্টারগুলো ফের চালু হয়েছে, তবে রাইডারদের অনুরোধ করা হচ্ছে রাইডের সময় যেন তারা চিত্কার না করেন। সতর্কতার সঙ্গে আরো অধিকসংখ্যক রেস্টুরেন্ট চালু হচ্ছে। গত শুক্রবার ৯৯০ ইয়েন বা ৯ ডলারে নতুন ঠাণ্ডা ও শুষ্ক মাস্ক তাকে তুলেছিল শীর্ষ রিটেইলার ইউনিকলো। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানেই সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জাপানের অর্থনীতি যেখানে ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে, সেখানে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি কড়াভাবে অনুসরণের নির্দেশনাও দিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। মহামারীর আগে থেকেই কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে থাকা জাপানের অর্থনীতি চাঙ্গায় এর পর্যটন, রফতানি এবং বিকাশমান ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো চাঙ্গা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজের চিফ মার্কেট ইকোনমিস্ট ইয়ুশিমাসা মারুইয়ামা বলেন, জাপানের নভেল করোনাভাইরাস বিধি-নিষেধ যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশের মতো কঠোর নয়, কিন্তু যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা লক্ষ করার মতো।
গত বছরে কর বৃদ্ধির পর থেকে ধুঁকছিল জাপানের অর্থনীতি। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গাড়ি রফতানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোক্তা ব্যয় শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে এমনটা আশা করা যাচ্ছে না।
মারুইয়ামা বলেন, লকডাউন উঠে গেলে দেখা যাবে আমেরিকানরা ঘর থেকে বেরিয়ে অনেক ব্যয় করবে। কিন্তু জাপানের মানুষের মনোভঙ্গি এমন, তারা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি সতর্ক হয়ে পড়বে। মহামারী-পূর্ব আর্থিক তত্পরতার জায়গায় পৌঁছতে জাপানের ২০২৩ সাল লেগে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
যদিও বন্ধ দোকানপাট খুলছে, তবে সেগুলোয় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হচ্ছে। থিয়েটার, ইভেন্ট ও বারগুলোয় আসন সংখ্যা সীমিত রাখা হচ্ছে। খালি স্টেডিয়ামে পেশাদার বেসবল খেলা শুরু হয়েছে।
জাপানের আমদানি ও রফতানি উভয়ই হ্রাস পেয়েছে। টানা দুই প্রান্তিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দায় পড়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গায় সর্বশেষ আশার প্রতীক টোকিও অলিম্পিক আগামী বছর নাগাদ স্থগিত করা হয়েছে। এতে জাপানের শতকোটি ডলার লোকসান হয়েছে। কী পরিমাণ লোকসান হয়েছে, তা গোপন রেখেছে টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটি।
স্থানীয় ব্যবসাগুলোকে সহায়তা এবং নগদ অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ২৩০ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। জাপানি ভোক্তাদের অর্থব্যয়ে উৎসাহিত করতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ককে ৯৩০ ডলার করে দেয়া হচ্ছে।
কভিড-১৯-এ এক হাজারের মতো মৃত্যু নিয়ে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও রাশিয়া থেকে তুলনামূলক কম প্রাণহানি হয়েছে জাপানে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, দ্রুত সবকিছু খুলে দেয়ার মাধ্যমে জীবনের চেয়ে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে জাপান সরকার।
এরই মধ্যে দুর্বল পর্যটন খাত চাঙ্গায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জাপান। নভেল করোনাভাইরাসে তুলনামূলক কম আক্রান্ত দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর জন্য সীমিত আকারে সীমান্ত খুলে দিয়েছে সরকার।
জাপানের জাতীয় পর্যটন সংস্থা বলছে, গত মে মাসে জাপানে মাত্র ১ হাজার ৭০০ পর্যটক এসেছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিন কোটির মতো পর্যটক আকর্ষণ করে আসছিল জাপান। এ পর্যটকদের বেশির ভাগই আসত দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন থেকে।
কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে জাপানের অভ্যন্তরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু এখন সেক্ষেত্রে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে এবং কিছু ট্যুরিস্ট স্পটে ডিসকাউন্ট কুপন দেয়া হচ্ছে।
জ্যাজ ক্লাব ও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। এপি অবলম্বনে