সীমান্তে ‘উসকানিমূলক’ গুলি চালিয়েছে ভারতীয় সেনা, অভিযোগ চীনের

অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের পাশাপাশি ভারতীয় সেনারা ‘উসকানিমূলক’ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। এর জবাবে চীনা সেনাবাহিনীও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে চীনের পক্ষ থেকে ঠিক কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। খবর বিবিসি।

এদিকে ভারত চীনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ভারতীয় নয় বরং লাদাখ অঞ্চলে চীনা সেনারাই প্রথম ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা আরো বাড়ল। ভারত বলেছে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সদস্যরা একটি ভারতের সেনাবাহিনীর একটি অবস্থানের কাছে আসে এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর মধ্য দিয়ে মূলত চীনা সৈন্যরা ভারতীয় সেনাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের সেনারা কোনো অবস্থাতেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) লঙ্ঘন করেনি। তারা গুলি ছোড়া কিংবা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপও নেয়নি।

তবে গুলি ছোড়ার অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে গত ৪৫ বছরের মধ্যে এ প্রথম ভারত-চীন সীমান্তে গুলির ঘটনা ঘটল। ১৯৯৬ সালের এক চুক্তির মধ্য দিয়ে উভয় দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বন্দুক কিংবা বিস্ফোরক ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু গুলির ঘটনা না ঘটলেও বিতর্কিত সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

পিএলএর মুখপাত্র ঝাং শুইলির বরাতে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, ভারতের সেনাবাহিনী পানগং সো লেকের দক্ষিণ তীরের কাছে শেনপাও পার্বত্য এলাকায় অবৈধভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে। আর ভারতের এ পদক্ষেপ উভয় দেশের মধ্যকার চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা ওই অঞ্চলে ফের উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

পিএলএর মুখপাত্র ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন, যেন অবিলম্বে এ ধরনের বিপজ্জনক পদক্ষেপ বন্ধ করা হয়। একই সঙ্গে যেসব সেনাসদস্য নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেছে, তাদের তুলে নেয়ার পাশাপাশি যারা উসকানিমূলক গুলি ছুড়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

কিন্তু এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তারা শান্তি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু একই সঙ্গে তারা যে কোনো মূল্যে সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় সংহতি ধরে রাখার ক্ষেত্রেও বদ্ধপরিকর। মূলত, এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনী চীনা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল যে চীনা সেনাবাহিনী বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা থেকে পাঁচ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিককে অপহরণ করেছে। আর এর ঠিক একদিন পরই নতুন করে সোমবার মধ্যরাতে মুখোমুখি হলো উভয় দেশের সেনাবাহিনী।

এ বিষয়ে ভারতের ক্যাবিনেট মন্ত্রী কিরেন রিজুজু গতকাল টুইটারে বলেন, পিএলএ ভারতের বার্তায় সাড়া দিয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের ওই পাঁচ তরুণকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

মূলত গত জুনে চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে সৈন্য সংখ্যা ও ভারী অস্ত্রসজ্জা বৃদ্ধি করছে চীন ও ভারত। এর আগে আগস্টে ভারতের পক্ষ থেকে চীনের বিরুদ্ধে দুবার উসকানিমূলক আচরণের অভিযোগ তোলা হয়। তবে চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তেজনা সৃষ্টির দায় সম্পূর্ণভাবে ভারতের ওপর চাপায়। উল্লেখ্য, চীন ও ভারতের মধ্যে একবারই যুদ্ধ হয় ১৯৬২ সালে। ওই যুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *