সরকারি প্রণোদনায় দেশে আউশের আবাদ বেড়েছে: কৃষিমন্ত্রী

সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়ার ফলে দেশে আউশ ধানের আবাদ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। গতকাল মেহেরপুর জেলা প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আয়োজিত মেহেরপুর সদর উপজেলার কালাচাঁদপুর গ্রামে আউশ ধান কর্তন উদ্বোধনকালে অনলাইনে এ কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আউশ আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের বীজ, সার, সেচসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। সারের দাম কমানো হয়েছে। অন্যদিকে কৃষিবিজ্ঞানীরা অনেকগুলো উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন করেছেন, যেগুলো চাষের ফলে গড় ফলনও বেড়েছে। আজকের ক্রপ কাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বিঘা জমিতে এখন ১৮-১৯ মণ ধান হচ্ছে, যেটি অত্যন্ত গর্বের ও অহংকারের। অথচ একসময় আউশ উৎপাদন সবচেয়ে কম হতো। বিঘায় মাত্র দু-তিন মণের মতো। ফলে এ বছর অনেক উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে কৃষকরা আউশ চাষ করেছেন। সারা দেশে আউশের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের বাজারজাতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকায় শাকসবজির অনেক দাম। এ দেশের কৃষিপণ্যকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের বাজারে রফতানি করতে পারলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সেজন্য পূর্বাচলে একটি এগ্রো প্রসেসিং সেন্টার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যাতে করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এ দেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি করা যায়।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ অঞ্চল। দেশের কৃষিতে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তাই এ অঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে দেশের কৃষি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের কৃষির উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে সেচের সুবিধার জন্য কিছু নদী খনন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো নদী ও খাল খনন করা হবে। প্রতিমন্ত্রী এ সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে আরো এগিয়ে নিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, নতুন জাতের প্রসার ও জনপ্রিয়করণে এ ধরনের ফসল কর্তন উৎসব খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে ব্রি ধান-৪৮ আউশের একটি ভালো জাত, তবে এর চেয়েও ভালোজাত বা মেগাভ্যারাইটি ব্রি ধান-৮৩ নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া কৃষকের কাছে নতুন জাতের চাষাবাদ জনপ্রিয় করতে জেলা-উপজেলার ফান্ডের মাধ্যমে কিছু বীজ ক্রয় করা ও সংরক্ষণ করা গেলে সহজেই জাতগুলো জনপ্রিয় হবে।

উল্লেখ্য, মেহেরপুরে ক্রমাগত আউশ ধানের আবাদ দ্বিগুণ বেড়েছে। এ জেলায় ২০১০-১১ সালে আউশ আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে, চলতি বছরে আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। আর গত বছরের তুলনায় এ বছর শতকরা ৩০ ভাগ বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এ বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন অর্জিত হবে বলে আশা করছে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *