সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিবানিদ্রা গেলে জানবেন কিভাবে? কাদেরকে রিজভী

করোনা ভাইরাস মহামারিতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া নিয়ে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেই অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ দেখাতে বলায় তার প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ গণমাধ্যমে ও টেলিভিশনের ফুটেজে দেখেছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কিভাবে ত্রাণ বিতরণের বহরে তাণ্ডব চালিয়েছে। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে দিবানিদ্রা গেলে জানবেন কিভাবে, দেখবেন কিভাবে?’

মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ‘সরকার ব্যর্থ’- এমন দাবি করে রিজভী বলেছেন, ‘দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সাড়ে তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতায় এখন সর্বত্রই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মহামারি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয়ভাবে কাজের সমন্বয় নেই। নেই সুনির্দিষ্ট কোনও পলিসিও। ক্ষমতাসীনদের মনোযোগ দুর্নীতি-লুটপাটে। এরা ভাইরাসের রাজনীতিকরণেই ব্যস্ত আছে।’

এসময় তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিএনপির ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে হামলা চালাচ্ছে বলে আবারও অভিযোগ করেন।

মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে বিএনপির করা অভিযোগের জবাবে গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোথায় কে বাধা দিয়েছে আপনারা স্পষ্ট করুন, তথ্য-প্রমাণ দিন। অভিযোগ সত্য হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। মানবিক কাজে বাধা প্রদান আওয়ামী লীগের নীতি নয়।’

করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত ল্যাব এবং দক্ষ জনবল না থাকায় লক্ষ্য নির্ধারণ করে নমুনা পরীক্ষায় নামতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে ঢের বিলম্ব হচ্ছে। মফস্বল থেকে জেলা সদরের ল্যাবে নমুনা পৌঁছে স্তুপ হয়ে পড়ে থাকছে। ফলে এসব নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এতে দেশে আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।’

ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগকালীন সময়ে দেশে যখন দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে তখন ক্ষুধার্ত ও নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। কিন্তু আমাদের ত্রাণ বিতরণে বাধা দেয়া হচ্ছে। হামলা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। মামলা-গ্রেফতারও করা হচ্ছে। এই বর্বরোচিত হামলা করোনাক্রান্ত দেশকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনা ভাইরাসের মরণছোবল থেকে মানুষকে উদ্ধার নয়, বরং সারা দেশে সন্ত্রাস চালিয়ে সরকার নিজেদের লুটপাট ও গদি সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অসহায় মানুষের চিৎকার ও ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার তাদের হৃদয়কে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে না। করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগকালীন সময়ে গত ২১ মে সাতক্ষীরা জেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামনগর উপজেলার অসহায়, গরিব ও ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে ২১ জুন বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের নির্দেশে তার সন্ত্রাসী পুত্র উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক রাজিব হায়দারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা দফায় দফায় বর্বরোচিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একটি মাইক্রোবাসসহ কমপক্ষে ১৫-২০টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর এবং বেদম পিটিয়ে বহু নেতাকর্মীকে আহত করে।’

রিজভী বলেন, ‘এমপি পুত্রের নেতৃত্বে ন্যাক্কারজনক এই সহিংস হামলার ঘটনাটি সকল পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি মানুষ ক্ষোভ ও ধিক্কার জানায়। হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এই নারকীয় হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের ঘোরতর সন্দেহ, এই হামলা সরকারের উপর মহলের ইঙ্গিতে ও জ্ঞাতসারেই হয়েছে। একারণে তাদের দলের পোষ্য সন্ত্রাসীদের এতো বড় অপকর্মকে আড়াল করতে চাচ্ছেন তারা। তথ্য-প্রমাণ জানার জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা আছে। বিভিন্ন এজেন্সি আছে। স্থানীয় প্রশাসন আছে। জনগণের টাকায় তারা বেতন পাচ্ছেন। কাজেই উক্ত অপকর্মগুলোর তথ্য তো কাদের সাহেবদেরই সর্বপ্রথম জানার কথা। কিন্তু সরকারি বাসভবনে বসে ভিডিও বার্তায় তথ্য-প্রমাণ চাওয়াটা হাস্যকর। এমনিভাবে ইতোপূর্বেও নারায়ণগঞ্জের মহিলা কাউন্সিলর ও মহিলা দল নেত্রী আয়শা আক্তার দীনা এবং ফেনীতে কৃষক দল নেতা আলমগীর চৌধুরী এবং ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন কমান্ডার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে গরিব ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর ছাত্রদল নেতা আবদুল মালেককে ত্রাণ বিতরণের সময় গ্রেফতার করে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এই ভয়াবহ দুর্দিনে সরকার যখন বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোকদেরকে ত্রাণ দিচ্ছে তখন বিএনপি প্রকৃত সাধারণ দুস্থ ও অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী। আর তাতে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। কোন কোন স্থানে আওয়ামী লীগের বি-টিমের ভুমিকা পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া শুধু নিজের মত প্রকাশের জন্য আইসিটি আইনে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে কয়েকদিন গুম করে রাখার পর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। যখনই আমরা জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবী করছি তখন কাদের সাহেব তথ্য-প্রমাণ চান।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী জঙ্গিদের লালন-পালন, মদদ ও আস্কারা দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় শক্তি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসীরা এই দুর্যোগকালেও যে অমানবিক, বর্বর ও নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করছে তা সকল স্বৈরশাসকদের রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। করোনাকালে আওয়ামী লীগ চরিত্র বদলায়নি। ত্রাণ লুট-চুরিতে তারা রেকর্ড করেছে। কয়েকদিন আগেই ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ নেতার গ্যারেজ থেকে ১২’শ বস্তা চাল উদ্ধার হয়েছে। ফলে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ দিতে গেলে বিনাভোটের মিডনাইট সরকারের গাত্রদাহ হওয়াটাই স্বাভাবিক।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *