মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর মালিক আল্লাহ। তিনি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তিনি চাইলে ফকিরকে আমির করে দিতে পারেন। আবার আমিরকে ফকির বানাতেও তার সময় লাগে না। ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবই তারই ইশারায় চলে। মানুষ যে জীবন নিয়ে বড়াই করে, তিনি ইচ্ছা করলে সেই জীবনকে মুহূর্তের মধ্যে শেষ করে দিতে পারেন। এ কারণে বড়ত্ব করার মতো আসলে মানুষের কিছুই নেই। আল্লাহর দয়া ছাড়া মানুষ এক মুহূর্ত কাল বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষের অভাব, পেরেশানি এসব থাকবে। আর এ নিয়ে জীবন চালাতে হবে। ইমানকেও বাঁচাতে হবে। দুনিয়ার সমূহ অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে। আর আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তাকে যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে উত্তোরণের পথ বের করে দেবেন। তার কোনো পেরেশানি থাকবে না। আর অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম)।
তাই বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করে নিজের অভাব অভিযোগের কথা আল্লাহকে জানাতে হবে। বান্দার প্রার্থনায় আল্লাহ খুশি হন। আল্লাহও চান, বান্দা যেন মন খুলে তার কাছে চায়। তাই আল্লাহর কাছে চাওয়া হলে আল্লাহ অবশ্যই রিজিক বাড়িয়ে দেবেন। অভাব দূর করবেন। আয়-উপার্জনে বরকত হবে। নিজে যেমন ভালো থাকবো, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করবো। তাহলে মানুষের উপর আল্লাহর রহমত থাকবে। কারণ যে মানুষের উপর রহম করে আল্লাহও তার উপর রহম করেন। যে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায় আল্লাহও তার সাহায্যে এগিয়ে যান।
অনেকে ছেলেমেয়ে নেই বলে বিষন্নতায় ভোগে। হে মানুষ, কেন তুমি বিষন্নতায় ভুগবে? তুমি কি জানো না? কীসে তোমার কল্যাণ সে কথা আল্লাহর চেয়ে ভালো আর কারো জানা নেই। তিনি আহকামুল হাকিমিন। তিনি অপাত্রে কিছুই দান করেন না। আবার কাউকে সমূহ কল্যাণ দিয়ে ইমানের পরীক্ষা নেন। কখনো কখনো জালিমকেও তিনি অসংখ্য নেয়ামতে ধন্য করেন। তাই জালিমের চোখ ধাঁধানো জৌলুস দেখে ইমানদার কখনো আফসোস করে না। বরং এ থেকে পানাহ চায়। তাই সবসময় আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর খুশি থাকতে হবে। আর তার কাছে চাইতে হবে। গভীর রাতে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। আল্লাহ আপনার প্রার্থনা কবুল করবেন। নিজেকে আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিন। আল্লাহও আপনার জন্য অনেক কিছু ছেড়ে দেবে। দুনিয়ার প্রাপ্তিতেই শুধু মানুষের সফলতা নয়, আখিরাতই মানুষের জন্য কঠিন ফয়সালা। যে ওখানে জিতে গেল, সে-ই প্রকৃত সফলতা লাভ করল।
অধিকাংশ মানুষ সবসময় শুধু নিজের কথাই ভাবে। কিন্তু একজন মুমিন কখনো শুধু নিজের কথা ভাবে না। সে তার আত্মীয়পরিজন ও আপনজনকে নিয়েও ভাবে। কারণ এটা তার ইমানি দায়িত্ব। মানুষ আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়। রিজিক বাড়াতে চায়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না। অথচ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন,‘যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত করতে চায় আর দীর্ঘায়ু কামনা করে সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)। অন্যদিকে হজরত যুবাইর বিন মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে,‘যে ব্যক্তি আত্মীতার সম্পর্ক ছিন্ন করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)। তাই বিষয়টির উপর বারবার গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে,‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)।
আত্মীয়স্বজন আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। এদের সাথে উত্তম আচরণের মধ্যদিয়ে নিজের রিজিক ও হায়াতকে বাড়িয়ে নিন। মানুষের এই উত্তম ব্যবহারের কারণে দুনিয়া ও আখিরাতে তার মর্যাদা বেড়ে যাবে। নিয়তে কোনো সমস্যা রাখা যাবে না। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আবার এই মানুষ যখন খোদার নাফারমানিমূলক কাজে লিপ্ত হবে তখন যে তাকে ছেড়ে আসবে, তা-ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। সবখানে মুমিনের কল্যাণ। কারণ সে খোদায়ী নির্দেশের বাইরে মনগড়া জীবনযাপন করতে পারে না।