ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নীতিনির্ধারকরা উচ্চমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে এটিই একমাত্র ঝুঁকি নয়। কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ায় কিছু অঞ্চলে আবারো লকডাউন আরোপ করেছে চীন। ফলে বন্ধের মুখে পড়েছে ওই অঞ্চলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যদিও চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের অর্থনীতি প্রসারিত হয়েছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলো বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে।
সিএনএন বিজনেসের খবর অনুসারে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি শূন্য-কভিড কৌশল নিয়ে এগিয়ে চলছে। যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে চলার সময় এসেছে। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কেন্দ্র শেনজেন। শনিবার শহরটিতে ৬৬টি সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সপ্তাহব্যাপী লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে বিবেচিত ছাড়া সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়ি থেকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
লকডাউন আরোপের পর প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের অন্যতম বড় সরবরাহকারী ফক্সকন শেনজেনে কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সেখানে সংস্থাটির দুটি বড় কারখানা রয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী পুনরায় কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া সংক্রমণ বাড়ার পর চীনের বৃহত্তম ব্যবসায়িক কেন্দ্র সাংহাইয়ে বিদ্যালয় ও সিনেমা থিয়েটার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি শহরটিতে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে।
শেনজেন ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ জিলিনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষও সোমবার থেকে বাসিন্দাদের বাসা থেকে বের হতে ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের এ প্রদেশটিতেই চাংচুন শিল্প কেন্দ্রের অবস্থান। এখানেই টয়োটা ও ফক্সওয়াগনের কারখানা রয়েছে। এ লকডাউনগুলো চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জিয়ান বন্ধ করার কয়েক মাস পর এসেছে। সে সময় বিশ্বের বৃহত্তম চিপ নির্মাতাদের দুটি স্যামসাং ও মাইক্রোনসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
মহামারী নিয়ন্ত্রণে গৃহীত চীনের এক কঠোর অবস্থান চীনের অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। এ মাসের শুরুতে দেশটির সরকার চলতি বছরের জন্য ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ হার গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এদিকে শক্তিশালী পরিসংখ্যান দিয়ে বছর শুরু করেছে চীনা অর্থনীতি। গতকাল প্রকাশিত জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এক বছর আগের তুলনায় শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ বাড়ার হার ২০২১ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ গতি। গত ডিসেম্বরেও শিল্পোৎপাদন বাড়ার হার ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
এছাড়া বছরের প্রথম দুই মাসে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। চান্দ্র নববর্ষের ছুটি এবং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের সময় ক্রমবর্ধমান চাহিদা খুচরা বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করেছে। এ বাড়ার হারও গত বছরের জুনের পর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। যেখানে অর্থনীতিবিদরা খুচরা বিক্রি ৩ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এটি ডিসেম্বরে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছিল।
দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে চীনা অর্থনীতি স্থিরভাবে পুনরুদ্ধার অব্যাহত রেখেছে। কর্মসংস্থান ও দাম সাধারণত স্থিতিশীল ছিল। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের হার কমানো ও আরো অবকাঠামো ব্যয়ের মতো নীতিগুলো চীনা অর্থনীতিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে সতর্ক করেছে।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে এ বিনিয়োগ বাড়ার হার ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। পাশাপাশি অবকাঠামোগত বিনিয়োগ ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ডিসেম্বরে এ বিনিয়োগ ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।