লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে

দেশে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হচ্ছে সোলার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। খরচ কমে আসায় এ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ বিনিয়োগ হলে ২০৪১ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকেই ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। একই সময়ের মধ্যে দেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। সেই হিসাবে মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক আসতে পারে সৌরবিদ্যুৎ থেকে। এজন্য লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। গতকাল এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘প্রপোজড সোলার এনার্জি রোড ম্যাপ ২০২১-২০৪১ অ্যান্ড রিয়েলিটি’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে সোলার হাব, রুফটপ সোলার, সোলার মিনিগ্রিড, সোলার হোম সিস্টেম, সোলার পাওয়ার টেলিকম, সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপিত হবে। ফলে ২০২১-৩০ সালের মধ্যে দেশে ৮ হাজার ৭৪৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে সৌরবিদ্যুৎ থেকে। এছাড়া ২০৩১-৪১ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে সোলার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে আরো প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াটে।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে মোট বিদ্যুতের ৭২ শতাংশ হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে, যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ আসবে সোলার থেকে, ২৪ শতাংশ আসবে বাতাস থেকে এবং হাইড্রো থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ।

ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতিসংঘের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে বাংলাদেশের বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ বলেন, চর এলাকায় প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের মাধ্যমে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপনে অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে সোলার নেয়ার জন্য। প্রয়োজন হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া।

ডেল্টাপ্ল্যানের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. এসএমএ মাকসুদ কামাল বলেন, সোলার প্রযুক্তি ডেল্টাপ্ল্যানের ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। এখানে যে হাবগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেখানে নদীর জমি পুনরুদ্ধার, কাপ্তাই ও হাওর-বাঁওড়ের কথা বলা হয়েছে। সেখানে পরিবেশগত বিষয়ও দেখতে হবে।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, সোলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। এ বিদ্যুৎ দিনের বেলা কোথায়, কীভাবে ব্যবহূত হবে, নাকি এগুলো স্টোরেজ করা হবে, তার খরচ কত হবে, সে বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।

ওয়েবিনারে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, রিসোর্স ম্যাপিংটা বেশি জরুরি। এ প্রেক্ষাপটে সোলার নিয়ে রোড ম্যাপিং করা হয়েছে। এটি বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণ করেছি। তারা সংশোধন ও পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করবেন। প্রধানতম সোর্স হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ, তাই এখন পর্যন্ত এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির অন্যতম দিকপাল ও উদ্যোক্তা দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক সুফী, রহিমআফরোজ রিনিউয়েবল এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার মেসবা মুইন, বুয়েটের সেন্টার ফর এনার্জি স্টাডিজের পরিচালক ড. ফারসিম মান্নান মোহাম্মদীসহ অনেকে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *