লকডাউনে ৩৫% সম্পদ বেড়েছে ভারতের বিলিয়নেয়ারদের

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ভারতের অতিধনী এবং তাদের কোটি কোটি অপ্রশিক্ষিত কর্মীর মধ্যে বিদ্যমান আয়বৈষম্যকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। এ কর্মীদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্ব এবং বেসিক স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে লড়াই করছেন। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। খবর পিটিআই।

‘দি ইনইক্যুয়ালিটি ভাইরাস’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালীন কেবল ২০২০ সালের এপ্রিলে ভারতের বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে এ সময়ে দেশটির ৮৪ শতাংশ পরিবার বিভিন্ন ধরনের আয়ের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, লকডাউন কার্যকর হওয়ার সময় গত বছরের মার্চ থেকে ভারতের শীর্ষ ১০০ বিলিয়নেয়ারের যে পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে, তা দিয়ে দেশটির ১৩ কোটি ৮০ লাখ দরিদ্র জনগণের প্রত্যেককে ৯৪ হাজার ৪৫ রুপি করে দেয়া যেত।

অক্সফাম বলেছে, দেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য অত্যন্ত মারাত্মক। মহামারী চলাকালীন ১ ঘণ্টায় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি যে অর্থ আয় করেছেন, তা একজন অপ্রশিক্ষিত কর্মীর আয় করতে ১২ হাজার বছর লাগবে। তাছাড়া আম্বানি প্রতি সেকেন্ডে যে আয় করেছেন, তা একজন কর্মীর আয় করতে তিন বছর লাগবে।

গত আগস্টে মুকেশ আম্বানিকে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর আগের এবং পরবর্তী মাসগুলোয় কোনো ধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই কঠোর লকডাউন কার্যকরের মাধ্যমে লাখ লাখ কর্মীকে চাকরি, অর্থ, খাবার ও আশ্রয় ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হয়েছিল।

নারী, পুরুষ ও শিশুদের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে শহর ছাড়ার এবং রাস্তায় মৃত্যুর মর্মান্তিক দৃশ্যগুলো খবরের শিরোনাম হয়েছিল। যদিও মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই বলে সংসদে ঘোষণা দিয়েছিল ভারত সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলের ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদির সরকারকে।

গত বছরের গোড়ার দিকে লকডাউনের প্রভাব স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার প্রায় ২০ লাখ কোটি রুপির একটি অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এটিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ‘স্বনির্ভর ভারত’ দর্শনের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন।

তবে অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতে এফডিআই বাড়ানো এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে মহাকাশ অনুসন্ধান চালানো অন্তর্ভুক্ত থাকায় অর্থনৈতিক প্যাকেজের প্রত্যক্ষ প্রভাব ২ লাখ কোটি রুপি কিংবা জিডিপির ১ শতাংশের কিছু বেশি ছিল। অথচ দেশের শীর্ষ ১১ বিলিয়নেয়ারের মহামারীতে বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদের ওপর মাত্র ১ শতাংশ কর আরোপ করা হলে ‘জন ঔষধি স্কিম’-এর বরাদ্দ ১৪০ গুণ বেড়ে যেত। ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন ওষুধ সরবরাহ ত্বরান্বিত করা যেত।

প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অসমতার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, যেখানে ভারতের শহরে ৩২ শতাংশ পরিবার এক কক্ষ এবং ৩০ শতাংশ পরিবার দুই কক্ষবিশিষ্ট বাড়িতে বসবাস করে, সেখানে সামাজিক দূরত্ব ও হাত ধোয়ার মতো নভেল করোনাভাইরাসের প্রটোকলগুলো বিলাসিতা ছিল।

একই প্রতিবেদনের একটি বৈশ্বিক সংস্করণে বিশ্বজুড়ে আয়ের অসমতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে বিলিয়নেয়ারদের ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

অক্সফামের মতে, সংকট শুরু হওয়ার পর বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলিয়নেয়ারের বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদ ভাইরাসজনিত কারণে পৃথিবীর যে কাউকে দারিদ্র্যের কবলে পড়ার হাত থেকে রক্ষা এবং করোনার ভ্যাকসিনের অর্থ জোগানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বেশি। এ ধরনের বৈষম্য দূর করার জন্য দাতব্য সংস্থাটি ভারতে অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি সংশোধন এবং নিয়মিত বিরতিতে এগুলো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *