রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চলচ্চিত্র

৫ নভেম্বর অ্যাপল টিভি প্লাসে মুক্তি পেয়েছে পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক সায়েন্স ফিকশন ড্রামা ফিঞ্চ। ছবিতে মনুষ্য চরিত্র আছে একটিই—তিনি রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ার ফিঞ্চ ওয়েইনবার্গ। সোলার ফ্লেয়ারে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে। দুনিয়ার তাপমাত্রা উঠেছে ১৫০ ডিগ্রিতে। সেন্ট লুইসের ভূগর্ভস্থ ল্যাবরেটরিতে একমাত্র মানুষ হিসেবে বেঁচে আছেন ফিঞ্চ। সঙ্গে আছে তার প্রিয় পোষা কুকুর গুডইয়ার।

এমন পরিস্থিতিতে ফিঞ্চ ব্যস্ত হয়ে ওঠেন একটি কাজে—উন্নত ধরনের একটি হিউম্যানয়েড রোবট তৈরিতে। কারণ তার মৃত্যুর পর গুডইয়ারের খেয়াল রাখবে কে? তাই তিনি গুডইয়ারের দেখভালের জন্য তৈরি করেন হিউম্যানয়েড রোবট জেফ। ফিঞ্চ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করে জেফকে মানুষের মতো করে তুলতে চান, যেন সে গুডইয়ারকে দেখেশুনে রাখতে পারে।

কাছাকাছি ধরনের গল্পে পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক সায়েন্স ফিকশন অনেক নির্মিত হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে আশাবাদী ভবিষ্যতের নির্মাণ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গল্পকে ভিত্তি করে সায়েন্স ফিকশন সিনেমা নির্মাণের ইতিহাস নতুন নয়। তবে যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে এ রকম নির্মাণের সংখ্যা। তারই সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য সংযোজন ফিঞ্চ।

প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯২৭ সালে ফ্রিত্জ ল্যাংয়ের সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম মেট্রোপলিসে দেখা গিয়েছিল মারিয়াকে। এটি ছিল গাইনয়েড বা নারী রোবট। সিনেমায় হাজির হওয়া প্রথম ফিকশনাল রোবট চরিত্রগুলোর অন্যতম হলো মারিয়া। এ গাইনয়েড তৈরি করা হয়েছিল আরেকজন জীবন্ত নারীর অনুকরণে।

যুগের পালাবদলে বিজ্ঞানের ময়দানে যে অবিশ্বাস্য সব পরির্তন হচ্ছিল, সেগুলো সিনেমার পরিচালকদের মনে ও কাজে প্রভাব রাখছিল। ষাটের দশকে চিন্তায় সক্ষম কম্পিউটারের আবির্ভাব অনেক চলচ্চিত্রকারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনই একজন ফরাসি পরিচালক জ্যাঁ লুক গোদার। তার আলফাভিলে দেখা যায়, কম্পিউটার আলফা সিক্সটি অরওয়েলের কাহিনীর স্টাইলে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। ১৯৬৮ সালে পর্দায় আসে স্ট্যানলি কুবরিকের সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম টু থাউজেন্ড ওয়ান: আ স্পেস ওডেসি। অচেনা এক বস্তুর সন্ধানে জুপিটারে মহাকাশযাত্রায় সঙ্গী হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত কম্পিউটার হাল নাইন থাউজ্যান্ড। হালের ছিল মানুষের মতো ব্যক্তিত্ব। দক্ষ নভোচারীর মতোই সে বিভিন্ন সমস্যা মহাকাশযাত্রীদের নানা পরামর্শ দিত। মানুষের লিপ রিডিং করে হাল তাদের কথা বুঝতে পারত।

১৯৭৭ সালে পর্দায় আসে সায়েন্স ফিকশন হরর ডেমন সিড। পরিচালক ছিলেন ডোনাল্ড কামেল। একই নামে ১৯৭৩ সালে ডিন কুন্টজের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল এ ছবি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে মানুষকে বন্দি করে ফেলতে পারে, সে আশঙ্কাকে দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। ড. অ্যালেক্স হ্যারিস তৈরি করেন প্রটিয়াস ফোর নামে একটি কম্পিউটার। এর ছিল নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রটিয়াস এমনই বুদ্ধিমান ছিল যে নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই সে লিউকেমিয়ার চিকিৎসা উদ্ভাবন করে। অন্যদিকে আরেক বিজ্ঞানী হ্যারিস তার কম্পিউটার আসক্তি থেকে নিজের পুরো বাড়ি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত করে ফেলেন। শুরু হয় মানুষ আর কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বগ্রাসী সংঘাত।

এরপর ছোট ও বড় পর্দায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভয় কাটিয়ে আসতে থাকে শান্তি-নিরাপত্তা রক্ষায় হিউম্যানয়েডের ব্যবহার। পল ভেরহোভেন নিয়ে আসেন রোবোকপ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই প্রিয় চরিত্র হয়ে ওঠে এ রোবট পুলিশ। এরপর জেমস ক্যামেরন আনেন দ্য টার্মিনেটর।

নতুন সহস্রাব্দে আতঙ্ক কাটিয়ে রোবট হয়ে উঠেছে প্রিয়পাত্র, মানুষের সঙ্গী। ব্রাড বার্ডের অ্যানিমেশন দি আয়রন জায়ান্টে দেখা যায়, ১৯৫৭ সালে এক বালকের প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে বিশালাকৃতির একটি রোবট। বিখ্যাত ইংরেজ কবি টেড হিউজের লেখা উপন্যাস দি আয়রনম্যান অবলম্বনে ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয় এ ছবি।

২০০১ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নামে ছবিই নির্মাণ করেন। ভবিষ্যতের পোস্ট-ক্লইমেট চেঞ্জ সমাজে ডেভিড নামে শিশুর মতো এক অ্যান্ড্রয়েড রোবটকে নিয়ে ছবির গল্প। এ ডেভিডের ভালোবাসার অনুভূতিও আছে।

এরপর যত দিন গড়িয়েছে রোবটের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক পর্দায় তত স্বাভাবিক হিসেবে হাজির হয়েছে। এ তালিকায় আছে রোবট অ্যান্ড ফ্র্যাংক, হার, আই অ্যাম ইয়োর ম্যান।

একসময় হাজির হয়েছে সায়েন্স ফিকশন সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। ২০১৪ সালে মুক্তি পায় এক্স মেশিনা। ফিকশন থেকে শক্তিশালী ডকুমেন্টারি এসে হাজির হয় ২০১৯ সালে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে মানবসমাজকে বদলে দিচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয় আইহিউম্যান। শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ দুনিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা কেমন হবে তাও অনুমানের চেষ্টা করা হয়েছে নরওয়েজিয়ান এ ডকুতে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *