যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ

যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে। তাতে বাতাস পুড়ে গেছে। উড়িয়ে নিয়েছে বাড়িঘর, মাটি, পানি- যা পেয়েছে সামনে। দূর দেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে বারুদের গন্ধ। আতঙ্কে কাঁপছে পুরো লেবানন, আশপাশের দেশ। যমদূত যেন অগ্নিরূপ ধারণ করে গ্রাস করেছে সব। এ এমন এক অবস্থা, যা না দেখলে লিখে বোঝানো যাবে না।
বলছি, লেবাননের রাজধানী বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা। যেকেউ ভিডিও দেখে বলবেন, পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ, যেমন পারমাণবিক বোমা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল হিরোশিমা-নাগাসাকিকে।

আসলে তা নয়। গোলাবারুদ জমা করে রাখা একটি গুদামে বিস্ফোরণ থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ ভারি হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৩০ জন মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। কত হাজার মানুষ আহত হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। রাস্তায় রাস্তায় বসে আছেন রক্তাক্ত সাধারণ মানুষ। রক্তে ভিজে আছে পুরো শরীর। সে অবস্থায় কেউ দৌড়াচ্ছেন প্রাণভয়ে। কেউ রাস্তার ওপর স্থবির বসে পড়েছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে। চারদিকে আর্ত চিৎকার। একি দেখছে বৈরুত! এ কি মর্মন্তুদ দৃশ্য।

বাড়িঘর ধংস হয়ে গেছে। অনেক বাড়ির বারান্দা উড়ে গেছে কোথায় কেউ বলতে পারেন না। আগুনসমেত ধোঁয়া উঠে গেছে উর্ধ্বকাশে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র, প্রলয়ংকারী ছিল যে, ১২৫ কিলোমিটার দূরে পাশের দেশ সাইপ্রাস থেকে তা অনুভূত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে বহুল আলোচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি বাড়ি। তবে তিনি নিরাপদ আছেন বলে তার দল নিশ্চিত করেছে।

শত্রু রাষ্ট্র ইসরাইল এমন হামলা চালানোর থিওরি প্রত্যাখ্যান করেছে লেবাননের যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব আজ বুধবারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে জরুরি প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের বৈঠক আহ্বান করেছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল।

বৈরুতের হোটেল দিউ হাসপাতাল আহত রোগীতে ভরে গেছে। সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন কমপক্ষে ৫০০ মারাত্মক আহত ব্যক্তি। তারা আর মানুষকে গ্রহণ করতে পারছে না। লেবাননের রেডক্রস বলেছে, আহত মানুষের ফোনকলে তারা ডুবে যাচ্ছেন। অসংখ্য মানুষ এখনও ধ্বংসাবশেষ বা বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন।
স্থানীয় ফাদি রুমিয়েহ বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে এবিসি মলে অবস্থান করছিলেন। তিনি বিস্ফোরণকে বর্ণনা করেছেন এভাবে- এ যেন পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ। সারা শহরে ধ্বংসস্তূপ। ২ কিলোমিটার দূরের ভবনও আংশিক ধসে পড়েছে। পুরো ঘটনা যেন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে। ধ্বংসযজ্ঞ চরম পর্যায়ের। কোনো ভবনের জানালা অক্ষত নেই।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *