যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় আঘাত হেনে ছয়জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে হারিকেন লরা। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। বাতাসে শিকড় ছেড়ে উড়ে গিয়ে বাড়িতে পড়েছে গাছ। বৃহস্পতিবার সকালে ঘণ্টায় ২৪১ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে রাজ্যটিতে আঘাত হানে ক্যাটাগরি চার মাত্রার এ ঘূর্ণিঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র (এনএইচএস) পূর্বাভাস দিয়েছিল, দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যয়কারী ঝড়গুলোর একটি হয়ে উঠতে পারে এটি। তবে আশঙ্কার চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। লুইজিয়ানায় তাণ্ডব চালিয়ে ভারি বর্ষণ নিয়ে আরকানসাসের দিকে এগিয়ে গেছে লরা। খবর রয়টার্স ও এপি।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং ৬৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। লুইজিয়ানা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের ঘরের ওপর গাছ পড়ে দুজন মারা যান। টেক্সাসে এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এটাকে ‘একটি অলৌকিক ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। রোববার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
টেক্সাস ও লুইজিয়ানা প্রদেশের সাত লাখেরও বেশি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পাওয়ার আউটেজ ডট ইউএস।
হারিকেন লরার শক্তিশালী ঝড়ো বাতাসে মূল উপড়ে উড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। এসব গাছ গিয়ে পড়েছে বিভিন্ন বাড়িতে। এমন ঘটনায় প্রাণ হারান চারজন। পরবর্তী সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আরো দুজন মারা গেছেন লরার আঘাতে।
তবে আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুসরণ করেনি লরা। যে ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমন ক্ষতি হয়নি। যদিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো ঝড়টি বেশ শক্তিশালী রয়েছে ও ক্ষয়ক্ষতির পুরো মূল্যায়ন শেষ করতে কয়েকদিন লেগে যাবে। লুইজিয়ানার গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ডস বলেন, রাজ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় ছিল এটি।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় এনএইচসি জানায়, লুইজিয়ানার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আরকানসাসের দিকে মোড় নিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে ঘূর্ণিঝড় থেকে নেমে ঝড়ে পরিণত হয়েছে লরা। ঘণ্টায় ২৪ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে চলেছে সেদিকে। এর ফলে সৃষ্টি হতে পারে ভারি বর্ষণ ও অকস্মাৎ বন্যা।
লুইজিয়ানা রাজ্যের বেশির ভাগ অঞ্চলেই আঘাত হেনেছে শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়টি। ক্যামেরন শহরে ১৫ ফুট উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এর ফলে অনেক জায়গায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
লেক চার্লস শহরের বাসিন্দারা বলছেন, হারিকেন লরার আঘাতে তাদের কাচের জানালা ভেঙে গিয়েছে। ৭৮ হাজার মানুষের এ শহরটির ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮৫ থেকে ১২৮ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা হাওয়া বয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লেক চার্লস শহরের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করেছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা। কিছু বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে গিয়েছে এবং কয়েকটি সেমি-ট্রাক রাস্তা থেকে সরে গিয়েছে।
বর্ডেন উইলসন নামে লেক চার্লসের এক বাসিন্দা জানান, মিনডেন থেকে উদ্ধারের পর তিনি বাসায় ফিরতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। টেলিফোনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ৩৩ বছর বয়সী এ শিশু চিকিৎসক বলেন, আমি আমার জানালা বন্ধও করতে পারিনি। এ প্রথমবারের মতো হারিকেনে পড়লাম। আমার একটা আশা আমার বাড়ি ঠিকঠাক থাকুক।