যুক্তরাষ্ট্রের চোখে এখনো নিরাপত্তা হুমকি জিটিই

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির অভিযোগ বাতিল করার লক্ষ্যে জিটিই করপোরেশনের করা আবেদন খারিজ করেছে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি)। গত জুনেই শেনজেনভিত্তিক দুই চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে টেকনোলজিস এবং জিটিই করপোরেশনকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছিল এফসিসি। খবর এনগ্যাজেট।

সে সময় সতর্কবার্তা হিসেবে এফসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কোম্পানি দুটির সরঞ্জাম ব্যবহার করার মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তবে দুটি কোম্পানিই চীনা সরকারের পক্ষে নিজেদের ওপর আরোপ করা গুপ্তচরবৃত্তির এ অভিযোগ অস্বীকার করে। পাশাপাশি তারা অভিযোগ পুনর্বিবেচনা করে কাজ করার সুযোগ বহাল রাখার জন্য কমিশনের কাছে অনুরোধও জানিয়েছিল। কিন্তু এ পরিপ্রেক্ষিতে জিটিইর আবেদন খারিজ করে নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি বহাল রাখল এফসিসি। অন্যদিকে আরো কিছু সময়ের জন্য ঝুলে থাকল হুয়াওয়ের ভাগ্য। এ কোম্পানিটির ভাগ্যে কী ঘটবে তা জানা যাবে সামনের মাসে।

জিটিই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, মার্কিন টেলিকম অপারেটরগুলো এফসিসির বার্ষিক ৮৩০ কোটি ডলারের সরকারি তহবিল ব্যবহার করে এ কোম্পানিটির কাছ থেকে কোনো সরঞ্জাম ক্রয়, উন্নতীকরণ কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে না। দেশটির অর্ধশতাধিক ছোট অপারেটর কোম্পানি নিজেদের নেটওয়ার্কের জন্য মূলত হুয়াওয়ে ও জিটিইর তুলনামূলক সাশ্রয়ী সরঞ্জামগুলোর ওপর নির্ভর করত। অবশ্য কেবল ছোট কোম্পানিগুলোই নয়, সেঞ্চুরিলিংক ও ভেরাইজন কমিউনিকেশনের মতো কয়েকটি বড় অপারেটরও তাদের সরঞ্জাম ও সেবা ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু এ ঘোষণার ফলে এখন পরিস্থিতি বদলে গেল। অন্তত জিটিইর সরঞ্জাম যে ব্যবহার করতে পারবে না সে বিষয়টি নিশ্চিত। ফলে এখন তাদেরও এফসিসির তহবিলের প্রয়োজন পড়বে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।

এফসিসির আগে উল্লিখিত হিসাব অনুযায়ী জিটিই এবং হুয়াওয়ের সরঞ্জামগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অপারেটরদের প্রয়োজন হবে ১৮০ কোটি ডলারের বেশি। এ বছরের শুরুতে সিনেট এ অপারেটরগুলোর সাহায্যের জন্য ১০০ কোটি ডলারের বাজেট অনুমোদন করে, যদিও সরকার এখন পর্যন্ত তহবিলের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। সে সময় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে এফসিসির চেয়ার অজিত পাই বলেছিলেন, আমাদের নেটওয়ার্ক অনিরাপদ সরঞ্জাম ও সেবার উপস্থিতি শনাক্ত করেছি। এখন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আমাদের নেটওয়ার্কগুলো বিশেষ করে গ্রামীণ ও ছোট অপারেটররা যেন বিশ্বস্ত বিক্রেতাদের সরঞ্জাম ব্যবহার করে। এমনকি প্রতিষ্ঠান দুটির যন্ত্রাংশের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীনা সেনাবাহিনীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এদিকে বুধবার জিটিইর আবেদন খারিজের ঘোষণা দেয়ার সময় এফসিসির চেয়ার অজিত পাই বলেন, আজকের নির্দেশনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টার পথে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বরে বিধিবদ্ধ সময়সীমার কয়েক মাস আগে উন্মুক্ত বৈঠকে বসবে কমিশন। যেখানে অপরাটেরগুলোর তাদের নেটওয়ার্ক থেকে অবিশ্বস্ত সরঞ্জাম সরিয়ে সুরক্ষিত ও বিশ্বস্ত কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য বিধি প্রয়োগের ব্যাপারে কমিশন ভোট প্রদান করবে। এটা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে কংগ্রেস উপযুক্ত তহবিল প্রদান করবে, যাতে করে আমাদের যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যেসব বিক্রেতা হুমকি তৈরি করছে তাদের কাছ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবে।

পাই টুইট করে আরো বলেন, চীনা কোম্পানিগুলোতে আইনিভাবে প্রবেশাধিকার নিয়ে চীন সরকার যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কার্যকলাপ চালায় সেই অভিযোগটিকে জিটিই কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি।

এদিকে ব্লুমবার্গ বলছে, এফসিসির ঘোষণায় কোথাও হুয়াওয়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। জানা গেছে, হুয়াওয়ে নিরাপত্তা হুমকি বিবেচিত হওয়ার পর পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার মন্তব্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি আবেদন পর্যালোচনার জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে সংস্থাটি। ধারণা করা হচ্ছে, হুয়াওয়ের অনুরোধ ও আবেদনের চূড়ান্ত ফল হয়তো আমাদের ১১ ডিসেম্বরেই জানা যাবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *