মুসলিম জাতির প্রধান ৮ বিশেষ বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শ্রেষ্ঠ উম্মাহ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই এ উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্বের অনেক বৈশিষ্ট্য পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ মুসলিম জাতির প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণে তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

এক. আল্লাহর জন্য নিবেদিত : একজন মুসলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁর জীবনের সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী, আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, ইবাদত ও আমার জীবন-মৃত্যু সবকিছু উভয় জগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬২)

দুই. সহজ পন্থা অবলম্বন : মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য জীবনব্যবস্থাকে সহজ করেছেন। আর জীবন যাপনে তাদের সহজ পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে যা সহজ তাই চান, তি তোমাদের জন্য যা কঠিন তা চান না।’
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যে নেই, তার ভালো কাজ তার জন্য হবে, তা মন্দ কাজের প্রতিফলও তার জন্য হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

তিন. ইসলামের দিকে আহ্বান : ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা মুসলিম জাতির আরেক বৈশিষ্ট্য। বরং ভালো কাজের দিকে মানুষকে ডাকা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করাও মুসলিমের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী, আপনি বলুন, হে মানবসমাজ, আমি তোমাদের সবার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৮)

চার. একতাবোধ : একতাবোধ মুসলিম জাতির আরেক বৈশিষ্ট্য। জাতি, বর্ণ, শ্রেণি-স্তর সবাইকে নিয়ে মুসলিম সমাজ গড়ে ওঠবে। তাদের মধ্যে কোনো শ্রেণিবৈষম্য বা বিরোধ-বিভক্তি থাকবে না। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমাদের এই যে জাতি তা তো একই জাতি, আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় করো।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫২)
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু শক্তকরে আঁকড়ে ধরো, পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো যখন তোমরা ছিলে পরষ্পরের শত্রু, তিনি তোমাদের মধ্যে সমপ্রীতি তৈরি করেন, অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে পরষ্পর ভাই-ভাই হয়ে গেলে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)
[১] নোয়াখালীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন জেলা পুলিশ সুপার ≣ পল্টনে ৫৬ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ৩ ≣ [১] প্রস্তুতি ম্যাচে টাইগারদের ব্যাটে বলে দাপট, কিন্তু ম্যাচ ড্র

পাঁচ. সহানুভূতিশীল : পরষ্পরের প্রতি অনুকম্পা ও সহানুভূতি মুসলিমদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সঙ্গীরা কাফিরদের প্রতি কঠোর ও পরষ্পরের প্রতি সহাভূতিশীল।’ (সুরা ফাতাহ, আয়াত : ২৯)

আরেক আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এবং আপনি তাদের (বাবা-মা) জন্য বিনম্র হয়ে নত হোন এবং বলুন, হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে তারা শৈশবে আমার প্রতি দয়া করেছেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত : ২৪)

ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর সে মুমিনদের মধ্যে অন্তর্ভূক্তি হন যারা একে অপরকে উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের ও অনুকম্পার। তারাই সৌভাগ্যশালী।’ (সুরা শামস, আয়াত : ১৭-১৮)

ছয়. সব স্থানে নামাজের সুযোগ : মুসলিম উম্মাহর জন্য জমিনকে পবিত্র ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়, যা আমার আগে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। আমাকে ভীতির মাধ্যমে এক মাস ভ্রমণের সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য পুরো জমিনকে মসজিদ ও পবিত্র ভূমি করা হয়েছে। অতএব আমার উম্মতের সবাই যেন নামাজের সময় হলে তা আদায় করে। আমার জন্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হালাল করা হয়েছে। আগেকার সময় একজনকে একটি গোত্রের কাছে পাঠানো হত, আমাকে পুরো মানবজাতির কাছে পাঠানো হয়েছে। আমাকে (কিয়ামতের দিন) সুপারিশের অধিকার দেওয়া হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৪৩৮, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫২১)

সাত. সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা : মহান ইসলামে পরিপূর্ণ দ্বিন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাই পবিত্র ইসলামী শরিয়তের মূলনীতিতে সংযোজন-বিয়োজনের অবকাশ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পূর্ণাঙ্গ করেছি, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পরিপূর্ণ করেছি এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বিন মনোনীত করেছি।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩)

আট. সাক্ষ্যদানের মর্যাদা : সর্বশেষ জাতি হিসেবে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর কাছে বিশেষ সাক্ষ্যদাতা হিসেবে গণ্য হবে। উমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম মারা গেলে তাঁর পক্ষে চারজন মুসলিম সাক্ষ্য প্রদান করলে আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা বললাম, তিনজন সাক্ষ্য দিলে? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দুইজন হলে? তিনি বলেন, দুইজন হলেও। এরপর আমরা একজন নিয়ে আর জিজ্ঞেস করিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ২৬৪৩)

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *