মাস্ক না পরায় থাই প্রধানমন্ত্রীকে ৬০০০ বাথ জরিমানা, ৪৮ প্রদেশে বিধিনিষেধ

মুখে মাস্ক না পরার কারণে জরিমানা করা হয়েছে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা’কে। দেশের ৪৮টি প্রদেশে কোনো ব্যক্তি যদি মুখে মাস্ক না পরেন তাহলে তাকে ২০ হাজার বাথ পর্যন্ত জরিমানা করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রাজধানী ব্যাংককও রয়েছে। কিন্তু সোমবার সেখানে মুখে মাস্ক না থাকার কারণে, প্রধানমন্ত্রীকে জরিমানা করা হয়। কোভিড-১৯ টিকাদান বিষয়ে একটি মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ওচা। কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করা তার অফিসিয়াল একাউন্টে দেখা যায়, তার মুখে মাস্ক নেই। এ জন্য অনলাইনে ভয়াবহ সমালোচনার শিকার হন তিনি। পরে ওই ছবি ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। করোনা ভাইরাস থাইল্যান্ডেও নতুন করে সংক্রমণ শুরু করেছে।
এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বেশ চাপ পড়েছে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য যারা মুখে মাস্ক না পরবেন তাদেরকে জরিমানা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমন নির্দেশ কার্যকর হয়েছে ৪৮টি প্রদেশে। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানী ব্যাংককে। সেখানে কমপক্ষে ৩০ রকম ব্যবসা ও সেবাখাত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিনেমা হল, পার্ক, চিড়িয়াখানা, বার, পুল এবং ম্যাসাজ পার্লার। ২০ জনের বেশি মানুষের একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শপিং মল এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

দ্রুত সংক্রমণ বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই বিধিনিষেধ, লকডাউন, কারফিউ বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিছু কিছু প্রদেশকে তাদের নিজেদের মতো করে বিধিনিষেধ আরোপ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেমন এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে গেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের কথা বলা হয়েছে। থাইল্যান্ডে আছে মোট ৭৬টি প্রদেশ। তার মধ্যে ৪৮টি প্রদেশে মুখে মাস্ক না পরলে জরিমানা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকক শহরের গভর্নর অশ্বীন কানমুয়াং বলেছেন, মুখে মাস্ক না পরার কারণে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা’কে জরিমানা করা হয়েছে ৬০০০ বাথ। সোমবার এই জরিমানা আদায় করতে গিয়েছিলেন শহরে পুলিশ প্রধান ও অন্য কর্মকর্তারা। কারণ, তিনি আইনের বিরুদ্ধে এই প্রথম অন্যায় করেছেন। তবে তার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

ওদিকে স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ সোমবার ঘোষণা করেছে যে, থাইল্যান্ডে এদিন নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ২০৪৮ জন। মারা গেছেন ৮ জন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে। এ নিয়ে থাইল্যান্ডে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭,৫০৮। মারা গেছেন ১৪৮ জন। ক্রমবর্ধমান আক্রান্তের কারণে হাসপাতালে বেড এবং আইসিইউয়ের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ করোনার টিকা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। থাইল্যান্ডের জনসংখ্যা কমপক্ষে ৬ কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে শতকরা মাত্র ২ ভাগেরও কম মানুষকে এই টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেয়া দেয়ায় এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে থাইল্যান্ড। এই সংক্রমণ শুরু হয়েছে মার্চে ব্যাংককের আশপাশে যেখানে রাতের বেলা লোকসমাগম খুব বেশি থাকে। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচার সরকার কঠোর বিধিনিষেধ দিতে অনিচ্ছুক। কারণ, এমনিতেই সেখানে মহামরির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসে পড়েছে।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর কোভিড-১৯ সিচুয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনের মুখপাত্র অপিসামাই শ্রীরাংসান বলেছেন, আগামী বৃহস্পতিবার প্রধান দুটি শহর ব্যাংকক ও চিয়াং মাই’সহ বিভিন্ন এলাকায় আরো কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করবে সরকার। তিনি আরো বলেছেন, যাদের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ছে তাদের সবার জন্য হাসপাতালে বেড যোগাড় করা বেশ কঠিন বিষয়। সরকার সব করোনা রোগীকে মেডিকেল সুপারভিশনের অধীনে রাখার নীতি গ্রহণ করবে। তিনি আরো বলেন, সরকার হাসপাতালগুলোতে অধিক পরিমাণ বেড যুক্ত করছে। মাঠপর্যায়ে অধিক পরিমাণ হাসপাতাল নির্মাণ করছে। এর মধ্যে ব্যাংককের স্টেডিয়ামগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব স্টেডিয়ামকে প্রথামিক পরিচর্যার স্থান বানানো হয়েছে।

ওদিকে বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ভারতে। তাই নিজস্ব নাগরিক বাদে ভারত থেকে কোনো পর্যটকের থাইল্যান্ড প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ১লা মে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছে নয়া দিল্লিতে অবস্থিত থাই দূতাবাস। ফলে থাই নাগরিকরা শুধু ভারত থেকে দেশে ফিরতে পারবেন অনুমোদিত ফ্লাইটে করে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *