মাল্টিমিলিয়নেয়ার সুন্দর পিচাই

সুন্দর পিচাই নামটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। বিশ্বজুড়ে সবাই তাকে এক নামেই চেনে। তিনি বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল ও প্রতিষ্ঠানটির প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। শান্ত আচরণ ও সাধারণ জীবনযাপন দেখে বোঝার উপায় না থাকলেও তিনি একজন মাল্টিমিলিয়নেয়ার। ভারতের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা পিচাই জীবনে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছেন। সেলিব্রিটি নেট ওর্থের হিসাবে সুন্দর পিচাইয়ের নিট সম্পদের পরিমাণ ৬০ কোটি ডলার।

আমেরিকান স্বপ্ন যে এখনো বেঁচে আছে, তার বাস্তব প্রমাণ সুন্দর পিচাই। তিনি টেক ইন্ডাস্ট্রিতে বছরের পর বছর কাজ করে নিজের সম্পদ তৈরি করেছেন। গুগলে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করেছেন। তার মূল বেতন বার্ষিক ২০ লাখ ডলার। এর পাশাপাশি তিনি বোনাস ও স্টক লভ্যাংশ পান।

দেড় দশক ধরে পিচাই গুগলে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে সিইও হিসেবে গুগলের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি বার্ষিক ছয় লাখের কিছু বেশি বেতন পেতেন। এরপর তার আয় দ্রুত বাড়তে থাকে। সে সময় কাজে খুশি হয়ে তাকে ২০ কোটি ডলারের পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয় গুগল।

১৯৭২ সালের ১২ জুলাই খুব সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম সুন্দরের। তার জন্মের আগে মা স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন। বাবা রঘুনাথ পিচাই ছিলেন একটি কারখানার বিদ্যুৎ মিস্ত্রি। চেন্নাইতে শৈশব কাটানো সুন্দর ছোট্ট বয়স থেকেই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন এবং বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিবিদ হিসেবে ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। যদিও ছোটবেলায় তাদের বাড়িতে কোনো টিভি ছিল না। ছিল না কোনো প্রযুক্তির ছোঁয়া। তিনি একবার বলেছিলেন, ভারতে বেড়ে ওঠার সময় আমার কম্পিউটার কিংবা ফোন ব্যবহারের খুব বেশি সুযোগ ছিল না। ফোন করার জন্য এলাকার একটি ফোন ব্যবহার করতে আমাকে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হতো।

সুন্দরের বয়স যখন ১২ বছর, তখন তাদের বাড়িতে প্রথম টেলিফোন সেট আসে। এ টেলিফোন প্রযুক্তির প্রতি সে তুমুল আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, অবশেষে আমাদের পরিবার একটি রোটারি ফোন পেয়েছিল। তারপর ফোনটি আমাদের জীবনকে আরো উন্নত করে তোলে। এটিই বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সহায়তা পৌঁছে দিতে আমাকে একটি পথ তৈরি করে দিয়েছিল।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন সুন্দর। আইআইটি খড়গপুরে স্নাতকে ভালো ফল করেন। এরপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড সেমিকন্ডাক্টর ফিজিক্স নিয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি পেয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তার আগে পর্যন্ত তিনি দেশেই পড়াশোনা করেছেন।

স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি শেষে সুন্দর সিলিকন ভ্যালির সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা অ্যাপ্লাইড ম্যাটেরিয়ালসে চাকরি নেন। এরপর ২০০২ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার পরিকল্পনা করেন। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন। ওইদিন গুগল বিনা মূল্যের মেইল সেবা জিমেইল চালু করেছিল। গুগলে চাকরি হয়ে যায় সুন্দরের। গুগল ক্রোম ও ওস বিভাগের পণ্য ব্যবস্থাপনা দলের নেতৃত্ব দিতে যোগ দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি গুগল ড্রাইভ, জিমেইল ও ম্যাপস সেবার দায়িত্বে ছিলেন। ধীরে ধীরে পরিচিত হন গুগলের করপোরেট সংস্কৃতির সঙ্গে। নতুন নতুন ধারণা দিয়ে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। সহকর্মীদের পেছনে ফেলে তরতর করে উঠতে থাকেন ওপরের পদে। ২০১৫ সালের আগস্টে তিনি গুগলের সিইও পদে অধিষ্ঠিত হন।

যুক্তরাষ্ট্র ও জন্মভূমি ভারতে তার সম্পদ রয়েছে। রিয়েল এস্টেটের মালিক হওয়া সত্ত্বেও পিচাই খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে তিনি সানফ্রান্সিসকোর বে এরিয়াতে থাকেন। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অলটোস হিলসে তার ১০ হাজার বর্গফুটের বাড়ি রয়েছে। তিন একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ বাড়িটি তিনি ২০১৪ সালে কিনেছিলেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *