মার্কিন জিডিপিতে ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি

আধুনিককালে এসেও বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই লিঙ্গ ও জাতিগত বৈষম্য বিরাজমান। শ্রমশক্তিতে যোগদান এবং বেতনের ক্ষেত্রে নারী ও সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আর এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতি প্রতি বছর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি হারাচ্ছে। জাতিগত ও লিঙ্গবৈষম্যের কারণে কেবল মার্কিন অর্থনীতিই ২০১৯ সালে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি হারিয়েছে। সানফ্রান্সিসকোর ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মেরি ডেলির সহ-রচনায় একটি নতুন সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে, এ বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমানভাবে ক্ষয়ক্ষতি করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ও শ্রমবাজারের ব্যবধান থেকে অর্থনৈতিক ক্ষতি আরো বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠায় লোকসানগুলো ১৯৯০ সালে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে দেশটিতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

সোমবার ফেড কনফারেন্সে সানফ্রান্সিসকো ফেডের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরা চোই বলেন, অনুসন্ধানগুলো উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে উৎসাহিত করছে। কারণ এটিই সঠিক কাজ হবে এবং এটি বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

চারটি ফেড ব্যাংকের আয়োজিত ভার্চুয়াল এ সম্মেলন জানানো হয়, শ্রমবাজারের অসম ফলাফল পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এবং সমানভাবে ভাগাভাগি করে সাফল্যের সঙ্গে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি নিয়ে আসার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো বেশি গুরুত্ব দিতে চায়।

সানফ্রান্সিসকোর গবেষকরা ৩০ বছরের বেশি সময়কালে জাতিগত ও লিঙ্গবৈষম্যের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করেছেন। এটির পরিমাণ ৭০ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। চোই বলেন, আমাদের যৌথ অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য লিঙ্গ ও জাতিগত সাম্য অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক স্থান পরিবর্তনগুলো মার্কিন শ্রমশক্তির জাতিগত গঠনকে পরিবর্তন করায় এ বিষয়গুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

স্পষ্টতই জিম ক্রো আইন ও রেডলাইনিংয়ের মতো বর্ণবাদী নীতিগুলো বর্ণের সম্প্রদায়ের জন্য আবাসিক পৃথকীকরণ এবং সম্পদ আহরণে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে এখনো নারীদের জন্য কাঠামোগত বাধা রয়ে গেছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, একই দক্ষতা ও শিক্ষা থাকার পরও সংখ্যালঘু ও নারীরা তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশায় পিছিয়ে রয়েছে। পর্যবেক্ষণযোগ্য ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিভা কিংবা দক্ষতা পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। এটি ইঙ্গিত দেয়, লিঙ্গ ও জাতি এখনো শ্রমবাজারের ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে বড় উপাদান হিসেবে কাজ করে।

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী বৈষম্য আরো বেশি স্পষ্ট করে তুলেছে এবং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে ব্যবধানগুলো মোকাবেলা করা জরুরি। কারণ বর্ণ ও লিঙ্গবৈষম্য শ্রমবাজারের ফলাফলের অস্বাভাবিক ক্ষতি করেছে।

এর আগে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, নারী ও পুরুষের বেতনবৈষম্যের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৬০ ট্রিলিয়ন ডলার। বেতনের এ বৈষম্যের কারণে ১৪১ দেশের জনসাধারণ মাথাপিছু গড়ে ২৩ হাজার ৬২০ ডলার করে হারাচ্ছে। লিঙ্গবৈষম্যের কারণে এশিয়ায় ৯ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকায়। মধ্যপ্রাচ্যে ৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

দরিদ্র অঞ্চলের দেশগুলোয় উন্নত দেশের তুলনায় আর্থিক ক্ষতির হিসাব কম মনে হলেও তাদের জিডিপির তুলনায় সম্পদহানির হার অনেক বেশি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *