মাদকের মামলার বেশির ভাগ আসামি খালাস পাচ্ছে

প্রায় প্রতিদিনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে মাদক কারবারিদের। কিছুদিন কারাবাসের পর আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবার একই বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হচ্ছে তারা। শেষ পর্যন্ত মামলা থেকেও খালাস পাচ্ছে এসব আসামি। মাদকের বেশির ভাগ মামলা থেকেই খালাস পাচ্ছে এই মরণনেশার ব্যবসায়ীরা। গত পাঁচ বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১৩ হাজার ৩শ’ ৪৮টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে সাজা হয়েছে ৫ হাজার ৭শ’ ২০টি মামলায় ৬ হাজার ৫শ’ ৯ জনের শাস্তি হয়েছে। খালাস হয়েছে ৯ হাজার ১শ’ ৪০ জনের। এছাড়াও গত ১১ বছরে ৬১ হাজার ৬শ’ ৮০টি মামলা পেন্ডিং রয়েছে।
খালাসপ্রাপ্তরা কারাগার থেকে বের হয়ে মাদক বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হয়।
এমনকি নিজের স্ত্রী, সন্তানদেরও এই মরণনেশার বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করে। রাজধানীতে মাদক মামলায় বারবার গ্রেপ্তার হয়েছে পল্লবীর মাদক সম্রাট রাজীব। পুরো মিরপুর জুড়েই তার মাদকের ব্যবসা। ২০১৭ সালে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাদন ফকির টাঙ্গাইল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন। ছয় মাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করে রাজীব। ওই এলাকায় আলোচিত আরেক মাদক ব্যবসায়ী মিস্টার। বারবার গ্রেপ্তার হলেও মাদক ব্যবসা থেকে সরে যান না মরণনেশার এই কারবারিরা। তাদের একজন মাদক সম্রাজ্ঞী আনোয়ারী। পল্লবীর মিল্লাত ক্যাম্পে হেরোইনের স্পট চালায় সে। পাঁচ বছর আগে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার হেরোইনসহ আনোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে। চার মাসেই জামিনে বেরিয়ে আসে সে। আবারো হেরোইনের স্পট চালু করে। সমপ্রতি প্রায় ২ কোটি টাকার ইয়াবা ও হেরোইনসহ র‌্যাব’র হাতে আটক হয় সম্রাজ্ঞী আনোয়ারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাওরানবাজার এলাকার এক নারী মাদকব্যবসায়ী জানান, তার ভাই, বোন, মা ও স্বামী গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করে। মূলত স্বামীর মাধ্যমেই এই কারবারে জড়িত হয় তারা। তাদের একটি চক্র রয়েছে যারা মাদক সংগ্রহ করে পুরো ঢাকা শহরে বিক্রি করে। মোবাইলফোনে সাঙ্কেতিক কথা বললেই তারা হোম ডেলিভারি পর্যন্ত দিয়ে থাকে। আর গাঁজার ক্রেতা সাধারণত শ্রমিকরা। রেললাইন এলাকায় প্রকাশ্যেই গাঁজা বিক্রি করে তারা। তারা একজন গ্রেপ্তার হলেও অন্যরা তাকে ছাড়িয়ে নেন। টাকা দিয়ে আইনজীবী নিয়োগ করে জামিনের ব্যবস্থা করেন। ওই নারী জানান, থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে না। এটা আগে থেকেই ম্যানেজ করা থাকে। মাঝে-মধ্যে ওপর থেকে চাপ এলে তবেই অভিযান চালায় পুলিশ। তবে সুযোগ পেলে ক্রেতাদের আটক করে পুলিশ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে গত বছর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল একজন সংগীত শিল্পীকে। নিজ বাসায় মাদকের আসর বসাতেন তিনি। কিছুদিন পরেই ওই মামলায় জামিনে বের হন তিনি। আবারো জড়িয়ে যান মাদক বাণিজ্যে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৪শ’ ৯৪টি মামলায় সাজা হয়েছে ২শ’ ৩৭ জনের। খালাস পেয়েছে ২শ’ ৮৮ জন। গত বছরে ১ হাজার ৬শ’ ৫৪টি মামলায় খালাস পেয়েছেন ১ হাজার ৭৮ জন। সাজা হয়েছে ৬শ’ ৭৮ জনের। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৪শ’ ৩৫ মামলায় খালাস পেয়েছেন ৯শ’ ১১জন। সাজা হয়েছে ৬শ’ ৩১ জনের। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৫শ’ ৪৪ মামলায় খালাস পেয়েছে ১ হাজার ৬শ’ ১৫ জন। সাজা হয়েছে ১ হাজার ৬৫ জনের। ২০১৬ সালে ৫ হাজার ৩শ’ ৪৮ মামলায় খালাস পেয়েছেন খালাস পেয়েছেন ৪ হাজার ২শ’ ৬ জন। সাজা হয়েছে ২ হাজার ৯শ’ ২৭ জনের। ২০১৫ সালে ১ হাজার ৮শ’ ৭৩ মামলায় খালাস পেয়েছেন ১ হাজার ৪২ জন। সাজা হয়েছে ৯শ’ ৭১ জনের।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুব্রত সরকার শুভ জানান, মামলার সংখ্যা অনেক হওয়ায় বিচার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ে যায়। মাদকের আসামিরা সাধারণত খারাপ প্রকৃতির লোকজন। এসব আসামি জামিন পেলে সাক্ষীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ, যারা এসব মামলার সাক্ষী, তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে যান না। এসব কারণেই অনেকক্ষেত্রে আসামিরা খালাস পেয়ে যান বলে মনে করেন তিনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *