মহানবীর উত্তম আদর্শ, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দিতেন তিনি

ইসমাঈল আযহার: [২] রাসুল (সা.) ছিলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ। নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকরাও অকপটে স্বীকার করেছেন যে মুহাম্মাদ (সা.) সর্ব কালের, সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব। রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। অর্থাৎ নৈতিক চরিত্রের সর্বোচ্চ মানের ওপর আপনি অধিষ্ঠিত।

[৩] প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি চরম শত্রুকেও ক্ষমা করে দিতেন। মক্কা বিজয়ের দিনে রাসুল (সা.) মক্কার লোকদের উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘হে কুরাইশরা! তোমরা আমার কাছ থেকে আজ কেমন ব্যবহার আশা করো?’ তারা বলল, সম্মানিত ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্রের মতো! তিনি বললেন, ‘তোমরা চলে যাও! আজ তোমরা মুক্ত!’ যারা একসময় তাঁকে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন, সামাজিকভাবে বয়কট করা এমনকি হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল, অথচ তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন! এভাবেই সহনশীলতা তাঁর চরিত্রকে নিয়ে গিয়েছিল এক অনন্য উচ্চতায়।

[৪] সৃষ্টিকূলের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মতো দানবীর আর কাউকে পাওয়া যাবে না। কেউ তাঁর কাছে কিছু চেয়েছে, অথচ তিনি তা দেননি এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। একবার তাঁর কাছে একজন লোক আসল সাহায্য প্রার্থী হয়ে, তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝের সব বকরি দিয়ে দিলেন। অতঃপর লোকটি নিজের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কেননা, মুহাম্মদ (সা.) এত বেশি পরিমাণে দান করেন যে তিনি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় করেন না। মুসলিম, হাদিস ২৩১২
[১] বিশ্বজুড়ে কীভাবে জৈব-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতে পারে, তা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে করোনা মহামারী বললেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ≣ টয়লেট পেপার না থাকলে মানবজাতিই তো বিলুপ্ত হয়ে যেতো করোনার আক্রমণে! ≣ [১] করোনাভাইরাস: দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে আগামী বাজেট ঘোষণা

[৫] সৃষ্টির সেরা মানুষ হয়েও তিনি বিলাশসতামুক্ত অত্যন্ত সাদা-মাটা ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) গাছের লতা-পাতা দিয়ে তৈরি করা বিছানায় ঘুমাতেন। এতে তার শরীর মুবারকে দাগ হয়ে যেত। সাহাবারা ভালো কোনো বিছানার ব্যবস্থা করার আবদার জানালে তার প্রতিউত্তরে তিনি বলতেন, ‘আমার দুনিয়ার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। আমি দুনিয়াতে একজন পথচারী ছাড়া আর কিছুই নই। যে পথচারী একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে একটু পরে সেটা ছেড়ে চলে যায়।’তিরমিজি, হাদিস ২৩৭৭

[৬] কোরআন নাজিলের সূচনালগ্নে তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে খাদিজা (রা.) এর কাছে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা ব্যক্ত করলে খাদিজা (রা.) তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। কারণ আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। বুখারি, হাদিস ৩

[৭] অতএব এরকম উন্নত আদর্শবান মানুষের ধ্বংস হবার কথা নয়। এ কথা হজরত খাদিজা তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কোনো নারীর গায়ে হাত তোলেননি। তিনি ছিলেন স্ত্রীদের কাছে একজন আদর্শ স্বামী। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। এবং আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। কেননা আমি আমার স্ত্রীদের কাছে উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৭৭)

[৮] তিনি তাঁর অধীন কাজের লোকদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তাদের ভাই বলে স্বীকৃতি দিয়ে শ্রমজীবি মানুষের মতো সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের ভাই ও তোমাদের খাদেম। মহান আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অতএব তোমাদের যার অধীনে তার ভাই আছে, তাকে তাই খাওয়ানো উচিত যা সে নিজে খায় এবং তাকে তাই পরানো উচিত যা সে নিজে পরে। সামর্থ্যের বাইরের কাজের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আর এ ধরনের কাজের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে দিলে তবে তাদের সাহায্য করো। বুখারি, হাদিস ১৩৬০

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *