‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিলে বিপাকে গ্রাহক

ফেনী শহরের পুলিশ কোয়ার্টার এলাকায় একটি ভবনের ছয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক আনিসুর রহমান। মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর তার স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তারপর পরিবার নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন এ শিক্ষক। জুনের শুরুতে বাসায় এসে দেখেন তিন মাসে তার বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৫ হাজার টাকা। অথচ প্রতি মাসে গড়ে তার বিদ্যুৎ বিল আসে ১৫০-৩০০টাকার মধ্যে। অতিরিক্ত এ বিল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি।

শুধু আনিসুর রহমানই নন, একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ফেনীর অধিকাংশ গ্রাহকই।

আনিস জানান, তিনি জানুয়ারিতে ১৫৩ ও ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। সব মাসেই তার বিদ্যুৎ বিল ৩০০ টাকার মধ্যে থাকে। পরে মিটার দেখে তিনি জানতে পারেন ১ হাজার ১৭২ ইউনিট বিদ্যুিবল অতিরিক্ত লিখে বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিল তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। পরে তিনি বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে আগামী মাস থেকে অতিরিক্ত ইউনিট সমন্বয় করে দেবে বলে জানানো হয়।

শিক্ষক আনিস বলেন, এক বছরে আমার বিদ্যুৎ বিল আসে ৪ হাজার টাকার মতো। মার্চ ও এপ্রিলে আমাদের বাসায় কেউ ছিল না। তার পরও বিদ্যুৎ বিভাগ দুই মাসে কীভাবে ৫ হাজার টাকা বিল করল তা বুঝতে পারছি না। এটা তো বিদ্যুৎ বিভাগ কৌশল করে আমার থেকে এক বছরের অগ্রিম বিল আদায় করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনীতে পিডিবির মোট গ্রাহক প্রায় ৫৮ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহককেই লকডাউনের দুই মাসের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত প্রায় ২৫-৩৫ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করতে হবে গ্রাহকদের।

হাসান শামছুর রহমান নামে এক বাড়িওয়ালা বলেন, এখন মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ। মানুষ বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় তার বিল্ডিংয়ে ৬ হাজার ৩৭৩ ইউনিট অতিরিক্ত বিল করে অন্তত ৪৪ হাজার টাকা অগ্রিম বিল নিয়ে গেছে। এটা বিদ্যুৎ বিভাগের অমানবিক আচরণ।

ফেনী শহরের পুলিশ কোয়ার্টার এলাকার মিটার রিডিং করেন দুলাল মিয়া। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে মিটার না দেখে অনুমান করে বিল তৈরি করা হয়েছে। তাই কিছু মিটারে অতিরিক্ত বিল এসেছে। আমরা আগামী মাসগুলোয় তা সমন্বয় করে দেব। বিদ্যুত্সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ থেকে বাঁচতে এখন সবাইকে বিল দিয়ে দিতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিদুল ইসলাম অতিরিক্ত বিলের বিষয়টি স্বীকার করে বণিক বার্তাকে বলেন, আগামীতে এ বিল সমন্বয় করে দেয়ার আশ্বাস দেন।

এদিকে একই অবস্থা যশোরেও। করোনা পরিস্থিতিতে যশোর বিদ্যুৎ বিভাগের ভুতুড়ে বিলের কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

যশোর-খুলনা সড়কের চয়নিকা পেট্রল পাম্পের সামনের দোকানি ইউনাইটেড ফুয়েল পাম্পের মালিক রিয়াজ উদ্দিন জানান, তাদের কাছে প্রায় চার মাস ধরে ভৌতিক বিল পাঠানো হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কমার্শিয়াল বিলের ক্ষেত্রে এ ঘটনা অসহনীয় হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো যশোরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শহিদুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যশোরে কোনো কোনো গ্রাহকের অভিযোগ ছিল। তবে তা গত মে মাসের বিলে সমন্বয় করে নেয়া হয়েছে। চলতি জুন থেকে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *