মৌলভীবাজার: সূর্যালোক বেগুনের গায়ে পড়তেই ঝিকিমিক করে উঠে। মৃদু বাতাসে হঠাৎই দোল লাগে গাছগুলোতে। ঝুলে থাকা ছোট গাছের এসব বেগুনের দল হালকাভাবে দুলতে থাকে। এ দোলখাওয়া বেগুনগুলোকে নিয়েই কৃষকের স্বপ্ন।
কৃষক তখন পরম যত্নে দিবস শুরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত উঠে উঠেন। গাছের শুকনো পাতাগুলোকে গাছ থেকে তুলে ফেলে দেওয়া, নিড়ানো, নানা জাতের সার দেওয়াসহ নানা ধরনের যত্নআত্তির কাজগুলো চলতেই থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এই বেগুনের নাম পার্পল কিং। এটি উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল। প্রতি বিঘাতে (৩০ শতাংশ জমি) প্রায় ৯ টন। প্রায় ১২ মাস এই গাছে বেগুন সংগ্রহ করা যায়। জমিতে পানি না উঠলে প্রতিটি গাছে একটানা দুই বছর পর্যন্ত ফসল ধরে। প্রতি মৌসুমে গাছ প্রতি ২০ থেকে ৩০ কেজি বেগুন হয়ে থাকে।
রোববার (২১ জুন) বেগুনক্ষেতে গিয়ে দেখা গেলো, একেকটি গাছে প্রায় ৫ থেকে ১০টি করে লম্বাকৃতির বেগুন ঝুলে আছে। পরিপূর্ণভাবে এরা তৈরি; শুধুই বাজারে যাওয়ার অপেক্ষা।
শ্রীমঙ্গল উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামের কৃষক মো. আবুল হোসেন বাংলানিউজকে এই বেগুন সম্পর্কে বলেন, আমি এক কেয়ার (৩০ শতাংশ) জমিতে তিন হাজার চারা লাগিয়েছিলাম। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার টাকা উঠে গেছে। আরও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আসতে পারে বেগুন থেকে।
এ বেগুন সম্পর্কে এই কৃষক বলেন, এটি কৃষকের আশার ভরসা। সত্যি বলতে কি প্রথমে আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম, লালতীরের পার্পল কিং লাগালে বেগুন থেকে লাভবান হতে পারবো কিনা, এটা নিয়ে। কিছুদিন পরে গাছগুলো যখন তরতাজা হয়ে ঠিকমতো ফসল আসতে শুরু হলো এবং সেই ফসল কোনো বাধা ছাড়াই গাছে বড় হওয়ার সুযোগ পেলো তখনই সেই ভয় কেটে গেলো। এর থেকে লাভের মুখ দেখা শুরু হয়।
সার সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গোবর সার, ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি, জিংক প্রভৃতিসহ প্রায় ১৪০ কেজি সার দিয়েছি। খচর পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা।
পাইকারি বাজারে বেগুন প্রতি কেজি ৩০/৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ৪০/৪৫ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে বেগুন থেকে প্রতি বছর আমার ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ থাকে বলেও জানান কৃষক হোসেন। এছাড়া তিনি বেগুনের পাশাপাশি টমেটো, রামাইশ, শসা, ঝিংগা, লালশাক, করলা প্রকৃতি ফলস চাষ করেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, পার্পল কিং এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের বেগুন তবে, এটি খেতে সুস্বাদু। সে বিবেচনায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। এটি বেশিদিন হয়নি বাজারে এসেছে; এই দু’-এক বছর হবে। কৃষকরা লাগানোর ছয় থেকে এক বছরের মধ্যেই লাভের মুখে দেখে থাকেন বলে এই প্রজাতির বেগুনটি বাজারে এসেই সাড়া ফেলেছে। তুলনামূলকভাবে এ বেগুনে পোকামাকড়ের উপদ্রপ কম।
১৮ থেকে ২০ মাস এই গাছের মেয়াদ থাকলেও এক বছর পর প্রকৃতিগতভাবে গাছ কিছুটা বয়োবৃদ্ধ হয়। তখন তুলনামূলকভাবে ফসল কম আসে। তবে ইচ্ছা করলে ফসলটি দুই বছর পর্যন্ত রাখা যায়। অন্যান্য ফসল থেকে এটি অধিকতর লাভজনক বলেও জানান এ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।