বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য কেনার অর্থ নেই

বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের পুষ্টিকর খাদ্য কেনার অর্থ নেই। বর্তমানে ৮০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে। আর জমির আকার দুই হেক্টরের কম এমন ১১ শতাংশ জমিতেই উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বের ৩১ শতাংশ খাদ্য। এ অবস্থায় বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থাপনাকে আরো ন্যায্য, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ)। তবে নীতিনির্ধারকরা কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এ পরিবর্তন ঘটাতে পারেন বলে জানাচ্ছে ইফাদ।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের নেতৃত্বে ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ফুড সিস্টেম শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানরা অংশ নেবেন। গত ১৮ মাসের প্রচেষ্টার একটি ফল হচ্ছে এ সম্মেলন। একে সামনে রেখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইফাদ। ‘গ্রামীণ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্য ব্যবস্থাপনার রূপান্তর’ নামক এ প্রতিবেদন গ্রামীণ ফুড ভ্যালু চেইন গঠনে নীতি প্রণয়ন এবং বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করছে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি না করে সব মানুষ পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য পায় এবং খাদ্য উৎপাদকরা উপযুক্ত আয় করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুষ্টিকর খাদ্য ব্যয়বহুল আবার ক্ষুদ্র কৃষকরা দরিদ্র। প্রচলিত খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গত ৭০ বছরে শিল্পায়িত কৃষি পদ্ধতি এবং স্বল্প মূল্যে অধিক ক্যালরি উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপুষ্টি, খাদ্য অপচয় এবং পরিবেশের ক্ষতি। প্রচলিত খাদ্য ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর ৩৭ ভাগ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

ইফাদের কৌশল ও তথ্য বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যোত্স্না পুরি বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে আমাদের দরকার একটি বিপ্লব। এতটাই নাটকীয় একটি বিপ্লব, যা আগের খাদ্য পদ্ধতিটাকে করে তুলবে অপরিচিত। আমরা জানি খাদ্যের উৎপাদন, বাজারজাত ও খাদ্যগ্রহণকে ন্যায্য এবং টেকসই করতে কী পরিবর্তন করতে হবে যাতে সবাই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারে।

প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ খামার এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যারা উৎপাদন-পরবর্তী ধাপগুলোতে খাদ্যের মজুদ, প্রক্রিয়াজাত, বাজারজাত ও খাবারের বিতরণকাজে নিয়োজিত। স্থানীয় মালিকানা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করলে এর মাধ্যমে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি হবে, বিশেষ করে নারী ও যুবকদের জন্যে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র কৃষকরা পাবেন নতুন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বাজার। ক্ষুদ্র কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে সাশ্রয়ী করতে হবে। নতুন প্রকৃতিভিত্তিক, কৃষি-প্রতিবেশকেন্দ্রিক উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে কৃষকরা সীমিত কার্বন ও টেকসই কৌশল ব্যবহার করে জলবায়ুসহিষ্ণু হতে পারেন। মূল্যনির্ধারণের জন্য এমন একটা পদ্ধতি চালু করতে হবে, যা পরিপূর্ণ ও প্রকৃৃত উৎপাদন খরচ তুলে আনবে এবং কৃষকদের বাস্তুসংস্থানবান্ধব সেবার জন্য প্রণোদনা দেবে।

অন্যদিকে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য পুষ্টিকর খাবারের প্রসার ঘটাতে হবে। বর্তমানে কমপক্ষে তিন বিলিয়ন মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। বাজারে মানুষের খাদ্য পছন্দ নির্ধারণ করার জন্য সরকারের শক্তিশালী নীতি থাকতে হবে। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার উৎপাদন জোরদার করার জন্য সরকার বাজারভিত্তিক কার্যক্রম ব্যবহার করতে পারে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দূর করতে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শাসন প্রক্রিয়াকে পুনরায় ভারসাম্যপূর্ণ করতে কাজ করতে হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *