বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরাই আ.লীগের বড় বাধা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। অন্তত ১২টি ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলররা দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আওয়ামী লীগ এখন জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়েছে। দলের সিনিয়র নেতারা বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করলেও তা গ্রহণ করেননি তারা।

এদিকে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইতোমধ্যেই মারা গেছেন দুজন। এমনকি নির্বাচন নিয়ে এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নির্বাচনের আগে এবং পরে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত এবং বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে চসিক নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিশেষ সুবিধা পেতেও পারে বিএনপি। সেজন্য নির্বাচনের আগে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। আর যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান তারা।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরে গত ১৪ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিত হওয়া নির্বাচন ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্বাচনে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

কাউন্সিলর পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর যারা নির্বাচন করছেন, তারা হলেন ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের সাহেদ ইকবাল বাবু, ৯ নং উত্তর পাহাড়তলীতে জহুরুল আলম জসীম, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলীতে মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নং সরাইপাড়ায় সাবের আহমেদ, ১৪ নং লালখান বাজারে এফ কবির মানিক, ২৫ নং রামপুরা ওয়ার্ডে এসএম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদে এইচএম সোহেল, ২৮ নং পাঠানটুলীতে আব্দুল কাদের, ৩১ নং আলকরণে তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩ নং ফিরিঙ্গীবাজারে হাসান মুরাদ বিপ্লব ও ৩০ নং ওয়ার্ডের মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তারা সবাই চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এদিকে আওয়ামী লীগ ছাড়াও ৩৫টি ওয়ার্ডে অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে সম্প্রতি এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে চসিক নির্বাচনে ১২ জন বিদ্রোহী কাউন্সিলর নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী ১২ জন সাবেক কাউন্সিলর মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। যাদের জেতানোর জন্য সাবেক মেয়র সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের জন্য বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এককভাবে জয়লাভ করতে পারেন। এছাড়া প্রার্থীদের অনড় অবস্থানের কারণে ভোটের আগে এবং পরে সংঘর্ষ এবং গোলযোগের আশঙ্কা আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

চসিক নির্বাচন কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ২৮ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আজগর আলী খুন হন। এ ঘটনার জেরে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরকে আটক করে পুলিশ। অন্যদিকে ৮ জানুয়ারি চসিক মেয়র প্রার্থী রেজাউলের জনসভায় ছুরিকাঘাতে আহত হন আশিকুর রহমান রোহিত। গতকাল ভোর রাতে রোহিত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বণিক বার্তাকে জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। যারা বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, তাদের ব্যাপারেও কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *