বাসে বাড়তি ভাড়া, ট্রেনের টিকিটের পেছনে ছুটছে মানুষ

পাবনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত বাস ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা। ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া যোগ করলে এক আসনের ভাড়া দাঁড়ায় ৫৬০ টাকা। তবে ঢাকা-পাবনা রুটের সব বাস ভাড়া রাখছে আসনপ্রতি ৭০০ টাকা। কোনো আসন ফাঁকাও রাখা হচ্ছে না। সম্প্রতি পাবনা-ঢাকা রুটের ‘পাবনা এক্সপ্রেসে’ ভ্রমণ করে এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন এক যাত্রী। প্রতি আসনে যাত্রী তোলার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে বাসের কর্মীরা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ঢাকায় এসে ওই যাত্রী বিষয়টি উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে অভিযোগও করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাবনা এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষের বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এর পরও বদলায়নি চিত্রটি। এখনো বেশি ভাড়া আদায় করেও পরিবহন করা হচ্ছে বাসভর্তি যাত্রী।

গত রোববার যশোর থেকে ঢাকা এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহবুব আলম। বাসে বাড়তি ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে ১৯ আগস্ট থেকে ট্রেনের টিকিটের চেষ্টায় ছিলেন তিনি। মাহবুব বণিক বার্তাকে জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টায় অনলাইন টিকিট বিক্রি শুরু হয়। টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনে ঠিক সকাল ৬টার দিকে চেষ্টা করেও তিনি কোনো টিকিট কাটতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে’ বাসে চেপে ঢাকায় আসেন।

দেশে ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিহন চলছে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে গিয়ে যেন বেসরকারি পরিবহন মালিকরা ক্ষতির মুখে না পড়েন, সে লক্ষ্যে বাড়ানো হয় বাসের ভাড়া। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, দেশের অনেক রুটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করছে না সিংহভাগ বাস। এমন অবস্থায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাসের বদলে ট্রেনকে বেছে নেয়ার চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। এক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে টিকিট পাওয়া নিয়ে। যাত্রীদের অভিযোগ, অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বেশির ভাগ রুটের টিকিট। অনেক যাত্রী আবার ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে চলে যাওয়ার অভিযোগ করছেন।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকারও করে নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কালোবাজারি ঠেকাতে কয়েক দিন আগে অন্যের টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করে সংস্থাটি। ভ্রমণের সময় বাধ্যতামূলক করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন। তবে এ ব্যবস্থা চালুর পর যাত্রীরা বেশ হয়রানির মধ্যে পড়েন। ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যাও কমে যেতে শুরু করে। ফলে চারদিনের মাথায় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রেলওয়ে।

এদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তা বলছেন, বর্তমানে দেশে মাত্র ৩০টি ট্রেন অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলছে। স্বভাবতই যাত্রীর চাহিদার চেয়ে ট্রেনের সংখ্যা কম। তাই টিকিট সংকট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ২৭ আগস্ট আরো ১৮টি ট্রেন চালু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরো সব ট্রেন চালু করে দেয়া হলে টিকিটের এ সংকট আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে ভাড়া কমিয়ে যত আসন, তত যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বাস মালিকরা। প্রস্তাবটি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান বরাবর। এ প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত এলে তা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *