বাজারে আসছে নতুন চাল, দাম কমছে ধীরে

নতুন ধান উঠলেই চালের দাম কমবে—খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন আশ্বাসে দীর্ঘদিন পথ চেয়ে ছিলেন ক্রেতারা। সেই আশা দুরাশাই রয়ে গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশের প্রায় সব অঞ্চলের ধানই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উঠে গেছে। কিন্তু চালের বাজারে তার তেমন প্রভাব নেই। কোনো কোনো চালের দাম এক থেকে দুই টাকা কমলেও বেশির ভাগ চাল বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি গুদামে চালের মজুদ কম থাকায় বাজারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে। চালের বাজারে গত কয়েক বছরে বড় কম্পানিগুলোর প্রবেশে মজুদব্যবস্থা কৃষকের হাত থেকে মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে চলে গেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট ও আটাশের নতুন চাল বাজারে আসছে। এতে এসব চাল কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে আরো নতুন চাল আসবে। তখন দাম আরেকটু কমবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দাম ৬১ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। দাদা, সালামসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চালও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। একই মানের এসব চালের দাম ৫৯ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া আঠা জাতের নতুন চালও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কিছু। বিক্রেতাদের দাবি এ ক্ষেত্রেও দু-এক টাকা কমে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেমেছে। পুরনো আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। এ ছাড়া নাজিরশাইল (কাটারি নাজির) আগের মতোই বাড়তি দাম ৬৬ থেকে ৭০ টাকা, মোটা গুটি স্বর্ণা ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম ৫ থেকে ৯ শতাংশ বেশি। তবে চিকন চালের দাম ৪ শতাংশ কমেছে। টিসিবির হিসাবে চিকন চাল সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। গতকাল ছিল ৫৭ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। মাঝারি মানের চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকা ছিল, এখন ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫২ ছিল এখন ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

বাজারের প্রায় সব দোকানেই গত সপ্তাহের তুলনায় চালের পরিমাণ অর্ধেকেরও কম দেখা গেল। জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, নতুন ধান উঠছে, কিছু কিছু চালের দাম এক-দুই টাকা কমেছে। আগামী দিনগুলোতে চালের দাম আরো কমতে পারে—এই শঙ্কায় সবাই ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছে। আগে যেখানে দোকানগুলোতে এক সপ্তাহ বিক্রির মতো চাল মজুদ থাকত, এখন দুই থেকে তিন দিনের চাল রাখছেন বিক্রেতারা।
[১] টেকনাফে সাড়ে ১২ কোটি টাকার ইয়াবাসহ আটক ১ ≣ [১] হেফাজতের ভাঙচুরের ঘটনায় ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা ≣ [১] ফরিদপুরের তরুণ গীতিকার সোহাগের লেখা গানে কণ্ঠ দিলেন সামিনা চৌধুরী

রাজধানীর গোপীবাগ বাজারের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির বিক্রেতা তাজুল ইসলাম বলেন, চালের দাম এখন স্বাভাবিকভাবেই কমবে। তাই বিক্রেতারা দোকানে অল্প করে চাল তুলছেন। যাতে লোকসানে পড়তে না হয়। দোকানে মজুদ কম থাকায় দাম কমছে ধীরে ধীরে।

মুগদা বাজারের মরিয়ম স্টোরের বিক্রেতা আলমগীর বলেন, আমদানির চালের মান তেমন ভালো না, দামও বেশি। তাই দেশীয় চালের চাহিদাই এখন সর্বোচ্চ। হাওরের ধান উঠলেও তা সাধারণত মফস্বলগুলোতে বেশি চলে। নওগাঁ, চাঁপাই, দিনাজপুরে চাল যখন পুরোদমে উঠবে তখন সরবরাহ বাড়বে, দাম আরো কমবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আশা করা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধান ৯-১০ লাখ টন বেশি উত্পাদন হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে গত বছর দুই কোটি এক লাখ ৮০ হাজার টন বোরো ধান উত্পাদন হয়েছিল। কিশোরগঞ্জের নিকলি, মিঠামইনসহ বিভিন্ন এলাকার হাওরে এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া নওগাঁ, দিনাজপুর এলাকার আগাম জাতের ধানও উঠতে শুরু করেছে।

কিন্তু ধানের উত্পাদন বাড়লেও বাজারে চালের দাম কমবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের। ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ এর ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাদ্যগ্রহণে প্রভাব’ শীর্ষক সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়, বর্তমানে চালের বাজারে সিন্ডিকেট না থাকলেও মজুদদারি রয়েই গেছে। সরকার অনুমোদিত বড় রাইস মিলাররা যে পরিমাণ চাল মজুদ করতে পারে তা চালের বাজার অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতেও সরকারি মজুদ ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সরকারের গুদামে চাল ছিল তিন লাখ ১১ হাজার টন। এর চেয়ে কম মজুদ ছিল ২০০৮ সালের অক্টোবরে, দুই লাখ ৮০ হাজার টন। এর আগের বছরই ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে দেশে চালের উত্পাদন ২০ লাখ টন কম হয়েছিল। ওই বছর সময়মতো চাল আমদানি করতে না পারায় বাজারে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকায় ওঠে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *