বাইডেনের ট্রানজিশন টিমে দল নয় প্রাধান্য পেয়েছে অভিজ্ঞতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে হোয়াইট হাউজে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলেছেন জো বাইডেন। কিন্তু নির্বাচনে জেতার অর্থ এই নয় যে বাইডেন এখন পুরোপুরি ভারমুক্ত; বরং তার জন্য সামনে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে মাস দুয়েকের কিছু বেশি সময় পাবেন বাইডেন। তবে তার আগেই কিছু বিষয় গুছিয়ে নিতে হবে তাকে। আর এ কাজে বাইডেনকে সহায়তা করবে ট্রানজিশন টিম (ক্ষমতার পালাবদলের প্রক্রিয়া মসৃণ করতে গঠিত টিম)। সম্প্রতি বাইডেনের ‘এজেন্সি ট্রানজিশন টিমস’ ঘোষণা করা হয়েছে। এ টিমে অর্থনীতি, রাজস্ব বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়ে রূপান্তরকালীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাইডেনকে সহায়তার জন্য একঝাঁক বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এ নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞতাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ এখানে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে বাইডেনের নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা যেমন ট্রানজিশন টিমে জায়গা করে নিয়েছেন, তেমনি ঠাঁই হয়েছে প্রগতিশীল অধিকারকর্মীদেরও। মহামারীসৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট, সম্পদের অসম বণ্টন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ বিদ্যমান সমস্যাগুলো মোকাবেলা যে বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে, এর মাধ্যমে তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার একটি বিবৃতির মাধ্যমে বাইডেনের ‘এজেন্সি ট্রানজিশন টিমস’-এর সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তালিকায় নাম থাকা সবাই যে নতুন প্রশাসনে যোগ দেবেন, তা নয়। তবে কয়েকজন দিতে পারেন। তারা পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনের মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করবেন এবং তাদের কাজের মাধ্যমে সেগুলোর প্রতিফলন প্রকাশ পাবে।’

ট্রানজিশন টিমে মার্কিন অর্থনীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাজস্ব বিভাগ সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখভালের জন্য যাদের রাখা হয়েছে, তাদের অনেকেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের পরিচিত মুখ। কেউ আবার প্রগতিশীল অধিকারকর্মী, যারা বরাবরই বলে আসছেন যে অসাম্য দূরীকরণে মার্কিন সরকারকে আরো বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।

মেরসা বেরাদেরান তাদেরই একজন। রাজস্ব বিভাগ টিমের হয়ে কাজ করবেন তিনি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এই অধ্যাপকের মতে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে প্রত্যেক মার্কিন পরিবারকে আরো বেশি প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক খাতে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ফেডের আরো আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করা উচিত।

এই টিমে আরো রয়েছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সাইমন জনসন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো মৌলিক গবেষণা খাতে সরকারের বিনিয়োগ কম হওয়া। তিনি মাঝারি আকারের শহরগুলোয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে আরো বেশি তহবিল বরাদ্দ রাখার পক্ষে।

রাজস্ব বিভাগ টিমে আছেন সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের কর্মী ন্যান্সি লি। তার লেখনীতে বারবার টেকসই উন্নয়নে অর্থায়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের ভূমিকার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

রাজস্ব বিভাগ টিমে ব্যাংকার খুব কমই রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম কিব্যাংকের নির্বাহী ডন গ্রেভস। এ টিমের নেতৃত্বের ভারও পড়েছে তার কাঁধে। কিব্যাংকের করপোরেট দাযবদ্ধতা ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। এ ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি বারাক ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তা ছিলেন এবং সে সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ও অর্থনৈতিক নীতিবিষয়ক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বাণিজ্যবিষয়ক ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ’স অফিসের সদস্যদের বাছাইয়ের সময় ইউনিয়ন স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এ টিমে রয়েছেন আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনের (এএফএল-সিআইও) নেতা জুলি গ্রিন ও সংগঠনটির সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক কর্মকর্তা সেলেস্তে ড্রেক। ড্রেক বর্তমানে ডিরেক্টর’স গিল্ড অব আমেরিকার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (নাফটা) নিয়ে আলোচনা চালানোর সময় তিনি ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ’স অফিসের অন্যতম পরামর্শক ছিলেন।

এ টিমের নেতা জ্যাসন মিলার বারাকা ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউজ ইকোনমিক কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। এছাড়া তালিকায় রয়েছে রাইলি ওলসনের নাম, যিনি অ্যালায়েন্স ফর আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের হেড অব ফেডারেল অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ব্যাংকিং খাতের পরিকল্পনা সাজাতে বাইডেনের ট্রানজিশন টিমে রয়েছেন গ্যারি জেন্সলার। তিনি দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন। জেন্সলার ২০০৯-১৪ মেয়াদে কমোডিটি ফিউচারস ট্রেডিং কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত দশকের আর্থিক সংকট-পরবর্তী পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।

এছাড়া এ টিমে রয়েছেন অ্যান্ডি গ্রিন, যিনি উদারপন্থী থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের ইকোনমিক পলিসি-বিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তালিকায় আরো রয়েছে ওয়াশিংটন সেন্টার ফর ইকুইটেবল গ্রোথের পলিসি ডিরেক্টর আমান্ডা ফিশার ও বেটার মার্কেটসের সিইও ডেনিস কেলেহারের নাম। কেলেহার ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাংকিং বিধিবিধান শিথিলীকরণ উদ্যোগের কড়া সমালোচক ছিলেন। রয়টার্স

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *