বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কযুক্ত সংবাদ পরিবেশনে যত্নবান থাকুন

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সম্পর্কযুক্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যত্নবান থাকতে হবে, যাতে ভুল, অসত্য কিংবা তথ্যনির্ভর নয় এমন কিছু দুই দেশের সম্পর্কে অহেতুক বিরূপ প্রভাব না ফেলে।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ইমক্যাব আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি করোনা টিকা নিয়েও কিছু ভুল, অসত্য সংবাদ আমাদের দেশে এবং ভারতেরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে, যা দুই দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির উপক্রম করেছে, পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলনে তা নিরসন হয়েছে।

ইমক্যাব সভাপতি বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। অতিথি ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবীব, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।

মন্ত্রী গভীর কৃতজ্ঞতাভরে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু আমাদের সহায়তাই করেনি, আমাদের মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যদের রক্তও মিশে আছে এবং বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোয় অনেক পরিবার তাদের ঘরের একটি বা দুটি কক্ষ শরণার্থীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ভারতের মানুষের এ অবদান, ভারতের অবদান, ভারতের সেনাবাহিনীর আত্মদান বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

বঙ্গবন্ধু এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। তত্কালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শুধু বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য নয়, বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে যাতে ফাঁসি দেয়া না হয়, সেজন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে এমন করে ৩০টি দেশ সফর করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছিল। এ অবদান কখনো ভোলার নয়।

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ছিল বিধায় তিনি ১৯৭৪ মৈত্রী চুক্তি করেছিলেন, সে কারণেই কিন্তু আমরা ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে আনতে পেরেছি, যদিও অনেক দিন এর বিরুদ্ধ অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। আজ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আরো গভীরে প্রোথিত হয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে আন্তঃসংযোগ সেটি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মনে করি এটি এখনো যথেষ্ট নয়। আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে আন্তঃসংযোগ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বাড়ানো প্রয়োজন। তাহলে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে, দুই দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্বে প্রতিবেশী সম্পর্কের দিক দিয়ে একটা উদাহরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। দুই দেশের ক্ষেত্রে যা করতে হবে তা বঙ্গবন্ধু আগেই দেখিয়ে গেছেন, আমাদের নতুন করে কোনো গাইডলাইনের দরকার নেই। দুই দেশের আশা আকাঙ্ক্ষা এক, কোনো পার্থক্য নেই।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *